ব্রহ্মপুত্র নদ দখল ও ভরাটের বিরুদ্ধে আবারও প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের ঘটনা ঘটেছে। সাম্প্রতিক সময়ে জামালপুরে নদী দখলের এক নতুন পাঁয়তারা শুরু হলে বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আনা হয়। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং পুলিশ সুপার (এসপি) সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেন। পুলিশের একটি দল এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভরাট কার্যক্রম বন্ধ করে দেন এবং নদীর পাড়ে গড়ে উঠতে থাকা অবৈধ স্থাপনাগুলোকে উচ্ছেদ করেন।
[caption id="attachment_7390" align="alignnone" width="487"] "ব্রহ্মপুত্রের তীরে অবৈধ স্থাপনার দৌরাত্ম্য—নদী হারাচ্ছে নিজস্বতা"[/caption]
২০১৯ সাল থেকে ব্রহ্মপুত্র বাঁচাতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন একদল নদীপ্রেমী, তবে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের চাপের মুখে তাদের কণ্ঠ যেন বাতাসে মিলিয়ে যায়। আন্দোলনকারীরা বারবার অপমানিত হয়েছেন, কিন্তু থেমে থাকেননি। তাদের এই অক্লান্ত প্রচেষ্টা সাময়িক সাফল্য পেলেও, দখলদাররা আবারও নতুন কৌশলে নদী দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ব্রহ্মপুত্র নদ দখলের ষড়যন্ত্রের শুরু ১৯৯৬ সাল থেকে। এক সময় প্রাণবন্ত এই নদী ধীরে ধীরে মরে যেতে থাকে, যার সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী মহল নদী ভরাট করে বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও গড়ে ওঠে দখলকৃত নদীর বুকে। প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের প্রতিবাদ সত্ত্বেও এই অবৈধ কার্যক্রম চলতে থাকে।
সরকার পরিবর্তনের পর নদী দখলদারদের উচ্ছেদের আশায় আন্দোলনকারীরা নতুন করে সংগঠিত হন। ৫ আগস্টের পর একাধিকবার মানববন্ধন করা হয়, স্মারকলিপি প্রদান করা হয় প্রশাসনের কাছে। তবে প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়, তাদের ভয় দেখানো হয়, এমনকি শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তবুও তারা থেমে থাকেননি।
নদী দখলদারদের দৌরাত্ম্য নতুন করে শুরু হয়েছে। অতীতের ধারাবাহিকতায় পরিবর্তিত বাংলাদেশে আবারও জামালপুরে নদী দখলের অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। কিন্তু নির্ভীক আন্দোলনকারীরা আবারও দখল রোধে ছুটে যান এবং প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে সাময়িকভাবে দখল প্রক্রিয়া বন্ধ করা হয়। তবে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, শীঘ্রই পুনরায় দখলের চেষ্টা চালানো হতে পারে।
নদী রক্ষার জন্য সাময়িক প্রতিরোধ যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন স্থায়ী সমাধান। এজন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি, নদী থেকে সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ: ওয়ান ইলেভেনের আদলে কঠোরভাবে সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। সরকারিভাবে নদীর সীমানা নির্ধারণ: নদীর জায়গা দখল ঠেকাতে সরকারিভাবে সীমানা নির্ধারণ করে প্রাচীর নির্মাণ করতে হবে। দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা: অবৈধ দখলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং পুনরায় দখলের সুযোগ দেওয়া যাবে না। নদী সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধি: ‘নদী বাঁচাও, দেশ বাঁচাও’ স্লোগানকে সামনে রেখে সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
নদী আমাদের প্রাণ, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের অস্তিত্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ব্রহ্মপুত্রসহ দেশের সব নদী রক্ষায় আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। নদী দখল বন্ধে প্রশাসনের পাশাপাশি সাধারণ জনগণকেও সোচ্চার হতে হবে। আসুন, সবাই মিলে আওয়াজ তুলি— ‘নদী বাঁচাও, দেশ বাঁচাও’!