কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার রেশ কাটতে না কাটতেই দক্ষিণ এশিয়ায় চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এরইমধ্যে পাকিস্তান সরকার বড় একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিয়ে ভারতীয় বেসামরিক ও সামরিক বিমানের জন্য আকাশসীমা বন্ধ ঘোষণা করেছে।
এই সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়েছে এবং প্রাথমিকভাবে এক মাসের জন্য বলবৎ থাকবে বলে জানিয়েছে পাকিস্তান সিভিল এভিয়েশন অথরিটি।
জারি করা নোটিসে (NOTAM) বলা হয়েছে, “পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানের আকাশসীমা ভারতের নিবন্ধিত কোনো বেসামরিক বা সামরিক বিমান চলাচলের জন্য খোলা থাকবে না। এমনকি ভারতীয় সংস্থাগুলোর চার্টার্ড ফ্লাইটগুলোও এই নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত।”
পাকিস্তানি গণমাধ্যম এআরওয়াই নিউজ জানিয়েছে, প্রতিদিন ১০০টির বেশি ভারতীয় বিমান পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার করে। এতে রয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া, ইন্ডিগো, আদিত্য জেট, আকাসা এয়ার প্রভৃতি। নতুন রুট ব্যবহারে ভারতীয় ফ্লাইটগুলোকে অতিরিক্ত দুই ঘণ্টা বেশি সময় নিয়ে উড়তে হবে। এতে জ্বালানি খরচ এবং সময় দুই-ই বাড়বে, ফলে প্রতিদিন কয়েক মিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত খরচ করতে হবে ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলোকে। এছাড়া পূর্ববর্তী এক নিষেধাজ্ঞায় ভারতীয় এয়ারলাইন্সগুলো প্রায় ৮০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল।
বিশ্বের ব্যস্ততম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে অন্যতম নয়াদিল্লি বিমানবন্দর সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবে এই সিদ্ধান্তে। ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ রুটেই পাকিস্তানের আকাশসীমা অতিক্রম করতে হয়। ফ্লাইট রুট ঘুরিয়ে নিলে এক ঘণ্টা বেশি সময় ও জ্বালানি খরচ হয়। রয়টার্স-এর খবরে বলা হয়েছে, নয়াদিল্লি থেকে মধ্যপ্রাচ্যগামী এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটগুলোর সময় বেড়ে যাচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে পণ্য পরিবহনে এবং ভাড়ায়।
এক নজরে ক্ষতির চিত্র:
বিষয় | আগের রুট | নতুন রুট | পরিবর্তন |
---|---|---|---|
সময় | ৪.৫ ঘণ্টা | ৫.৫–৬ ঘণ্টা | +১–১.৫ ঘণ্টা |
জ্বালানি | স্বাভাবিক | ২০–৩০% বেশি | বাড়তি খরচ |
পণ্যবহন | পূর্ণ | কম পণ্য | আয় হ্রাস |
ফ্লাইটঅ্যাওয়্যার অনুসারে, নয়াদিল্লি থেকে বাকু (আজারবাইজান) গামী ইন্ডিগোর একটি ফ্লাইট ৫ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট সময় নিয়েছে, যেখানে দক্ষিণ গুজরাট ঘুরে, আরব সাগর হয়ে ইরান অতিক্রম করে যেতে হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তানের এই সিদ্ধান্ত কেবল বিমান চলাচল নয়, আঞ্চলিক বাণিজ্য, পর্যটন এবং কূটনৈতিক সম্পর্কেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। দুই দেশের মধ্যকার সিন্ধু জলচুক্তি, কূটনৈতিক কর্মী প্রত্যাহার ও সীমান্ত বন্ধ করার ঘোষণাগুলোর প্রেক্ষিতে এটি পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলবে।