ব্যালন ডি’অর জয়ের স্বপ্নে একসময় রোনালদোর বাসায় থেকেও অনুশীলন করেছিলেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রোনালদো তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন নিজের অভিজ্ঞতা থেকে শেখার জন্য। কিন্তু সমর্থন ও সম্ভাবনার শীর্ষে থেকেও ভিনিসিয়ুস গত বছর অক্টোবরে ব্যালন ডি’অর জিততে পারেননি। তখন রোনালদো তাঁকে এক বার্তায় অভিভাবক ও বন্ধুসুলভ সান্ত্বনার পাশাপাশি ভবিষ্যতের আশা জাগিয়ে বলেছিলেন, “এবার হয়নি তো কী হয়েছে, পরেরবার হবে।”
রোনালদোর সেই আশা পূরণ এখনো হয়নি। তবে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর মাঠে ভিনিসিয়ুসের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে রোনালদোর গর্ব আরও বেড়েছে। চ্যাম্পিয়নস লিগে সালজবুর্গের বিপক্ষে জোড়া গোল করে ভিনিসিয়ুস শুধু রিয়াল মাদ্রিদেরই নয়, ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের ইতিহাসেও একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছেন।
চ্যাম্পিয়নস লিগের ওই ম্যাচে ভিনিসিয়ুস তাঁর রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে শততম গোলটি করেন। প্রথম গোলটি উদ্যাপন করেন বাঁ হাতের তর্জনী উঁচিয়ে এক ও ডান হাতে দুটি শূন্য তুলে ধরে, যা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এবং কিলিয়ান এমবাপ্পের শততম গোল উদ্যাপনের স্মৃতিকে মনে করিয়ে দেয়। এর কিছুক্ষণ পর তিনি দ্বিতীয় গোলটি করে রিয়ালের হয়ে নিজের গোলসংখ্যা ১০১-এ উন্নীত করেন। এই পারফরম্যান্স ভিনিসিয়ুসকে রিয়ালে ব্রাজিলিয়ানদের মধ্যে সর্বোচ্চ গোলদাতার শীর্ষস্থান দখলের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে।
রোনালদো রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে পাঁচ মৌসুমে ১৭৭ ম্যাচে ১০৪ গোল করেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি নিখাদ স্ট্রাইকার হিসেবে খেলতেন। অন্যদিকে, ভিনিসিয়ুস কখনো উইঙ্গার, কখনো ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলেছেন। তার পরও মাত্র ২৪ বছর বয়সে ভিনিসিয়ুস ২৯১ ম্যাচে ১০১ গোল করেছেন। রোনালদোর গোলসংখ্যা ছুঁতে তাঁর দরকার আর মাত্র ৪ গোল।
ভিনিসিয়ুস বর্তমানে ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে রয়েছেন। চলতি মৌসুমে তিনি ২৭ ম্যাচে ১৭ গোল করেছেন। গত মৌসুমে ৩৯ ম্যাচে তাঁর গোলসংখ্যা ছিল ২৪। তখন রিয়ালের হয়ে মৌসুমের সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন ভিনিসিয়ুস। রিয়ালের হয়ে সর্বশেষ কোনো ব্রাজিলিয়ান খেলোয়াড় হিসেবে মৌসুমের সর্বোচ্চ গোলদাতার কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন রোনালদো (২০০৫-০৬)।
রোনালদো রিয়ালের হয়ে লা লিগা ছাড়া বড় কোনো শিরোপা জিততে পারেননি। তাঁর ক্যারিয়ারে চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ও অধরা থেকে গেছে। সেখানে ভিনিসিয়ুস দুটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছেন এবং দুটি ফাইনালেই গোল করেছেন। তিনি রিয়ালের হয়ে ১৪টি ট্রফি জিতেছেন এবং ১৩টি ফাইনালে খেলেছেন, যেখানে ৮টি গোল করেছেন।
রিয়ালের হয়ে দ্রুততম ১০০ গোলের কীর্তি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর। তিনি মাত্র ১০৫ ম্যাচে এই মাইলফলক ছুঁয়েছিলেন। ১৬৪ ম্যাচে দ্বিতীয় দ্রুততম ১০০ গোল করেছিলেন রোনালদো (ব্রাজিলিয়ান)। ভিনিসিয়ুস এই তালিকায় অপেক্ষাকৃত বেশি ম্যাচ খেলে সেঞ্চুরি করলেও তাঁর ধারাবাহিকতা এবং সম্ভাবনা তাঁকে শীর্ষে নিয়ে যেতে পারে।
কালকের ম্যাচ শেষে ভিনিসিয়ুস বলেন, “এই জার্সিতে গোল করতে পেরে ভালো লাগছে। রোনালদোর চেয়ে আর তিন গোল দূরে আছি এবং এই জার্সিতে সর্বোচ্চ গোলদাতা ব্রাজিলিয়ান হওয়া থেকেও। আশা করি, আরও গোল করতে পারব।” তাঁর এই আত্মবিশ্বাস এবং দৃঢ় সংকল্পই রিয়ালের সমর্থকদের আশা জাগায় যে ভিনি শিগগিরই রোনালদোর রেকর্ড ভাঙবেন।
ব্রাজিলের হয়ে দুবার বিশ্বকাপজয়ী রোনালদো নিশ্চয়ই ভিনিসিয়ুসের অর্জনে গর্বিত। রিয়াল মাদ্রিদে তাঁর উত্তরসূরি ভিনিসিয়ুস শুধু রোনালদোর রেকর্ডই ভাঙছেন না, বরং ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের গৌরবকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন। রিয়ালে ভিনিসিয়ুসের এই যাত্রা নতুন প্রজন্মের জন্য এক অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।