জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার শিমুলতলীতে বেগুনের অন্যতম পাইকারি বাজার বসেছে। উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ও চরাঞ্চল থেকে কৃষকেরা বিপুল পরিমাণ বেগুন নিয়ে আসছেন এই বাজারে। পাইকারি বাজারে বেগুন ৯ থেকে ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু হাতবদলের পর সেই বেগুন খুচরা বাজারে গিয়ে ২০ থেকে ২৫ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। এতে লাভবান হচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা, আর ঠকছেন কৃষক ও সাধারণ ক্রেতারা।
মেলান্দহ উপজেলার উত্তর বালুরচর গ্রামের কৃষক আমির হামজা সাড়ে পাঁচ বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছেন। শনিবার বিকেলে তিনি শিমুলতলীর বাজারে গিয়ে প্রতি কেজি বেগুন ৯ টাকা দরে বিক্রি করেন। অথচ জামালপুর শহরের খুচরা বাজারে একই বেগুন আড়াই গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
কৃষক সুজন মিয়া জানান, একসঙ্গে অনেক সবজি বিক্রি করতে হয় বলে শহরের বাজারে গিয়ে বিক্রি করা সম্ভব হয় না। এ জন্য পাইকারদের কাছে কম দামে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হন তাঁরা।
বাজারে বেগুনের দামের এই বিশাল তারতম্যের পেছনে মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীদের ভূমিকা রয়েছে। পাইকারি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ নয়ন মিয়া বলেন, শিমুলতলীতে ৯ টাকা দরে বেগুন কিনে ঢাকার কারওয়ান বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে ১৮ থেকে ১৯ টাকা কেজি খরচ হয়। এতে তাঁরা কিছুটা লাভ করেন।
তবে বাজার খারাপ থাকলে লোকসানও হয় বলে জানান তিনি। এই হাতবদল প্রক্রিয়ার কারণে খুচরা বাজারে সবজির দাম কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
মেলান্দহ উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে প্রতিবছর ব্যাপকভাবে বেগুন চাষ হয়। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তার মতে, এ বছর উপজেলায় ১ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ করা হয়েছে।
উপজেলার পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন গ্রাম—বালুরচর, কান্দারপাড়া, টুপকারচর, সাদুপুর, শ্যামপুর, ঝাউগড়া—চরাঞ্চলে বেগুনের চাষ বেশি হয়। এখানকার চাষিরা প্রতি বছর শিমুলতলীর পাইকারি বাজারে বেগুন বিক্রি করেন।
গতকাল বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, জামালপুর-ইসলামপুর মহাসড়কের পাশে শিমুলতলীতে বিশাল মাঠে পাইকারি বাজার বসেছে। বিভিন্ন চরাঞ্চল থেকে চাষিরা ইজিবাইক, রিকশা, ভ্যান, ঘোড়ার গাড়ি, মহিষের গাড়িতে করে বেগুন নিয়ে আসছেন। বিকেল চারটার মধ্যেই পুরো হাট বেগুনে ভরে যায়।
পাইকাররা বিভিন্ন জেলা থেকে এসে কৃষকদের কাছ থেকে বেগুন কিনে ট্রাকে তুলছেন। প্রতিদিন শিমুলতলী বাজার থেকে দেড় হাজার মণ বেগুন সারা দেশে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম।
মেলান্দহ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল ফয়সাল বলেন, কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। প্রতিটি এলাকায় ভ্যানগাড়ি দেওয়া হয়েছিল, যাতে কৃষকেরা সরাসরি বাজারে সবজি বিক্রি করতে পারেন। কিন্তু বেশির ভাগ কৃষক এ পদ্ধতিতে যাননি।
তিনি আরও বলেন, চলতি বছর বেগুনের দাম শুরুর দিকে ভালো ছিল। তবে বর্তমানে বাজারে অন্যান্য শীতকালীন সবজি আসায় বেগুনের দাম কিছুটা কমেছে।
কৃষক সুজন মিয়া জানান, তিনি ২০ শতাংশ জমিতে বেগুন চাষ করেছেন। এতে খরচ হয়েছিল ১০ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করেছেন। তবে ন্যায্যমূল্য পেলে আরও লাভ হতো বলে মনে করেন তিনি।
পাইকারি বাজারে বেগুন ৯ থেকে ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও ঢাকার খুচরা বাজারে তা ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি, ট্রাক ভাড়া, বস্তা ক্রয়, বস্তা ভর্তির মজুরি, ট্রাকে ওঠা-নামার মজুরিসহ নানা খরচ এই দামের তারতম্যের জন্য দায়ী।
তবে স্থানীয় কৃষকেরা মনে করেন, মধ্যস্বত্বভোগীদের মুনাফা নেওয়ার কারণেই খুচরা বাজারে দাম কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
বেগুনের চাহিদা সারা দেশে ব্যাপক থাকলেও কৃষকেরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। পাইকারি ও খুচরা বাজারের দামের পার্থক্যের কারণে লাভের বড় অংশ হাতিয়ে নিচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। এ সমস্যা সমাধানে কৃষকদের সরাসরি বিক্রির সুযোগ বৃদ্ধি এবং বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নতি প্রয়োজন।