কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্ত বাণিজ্য কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। এর মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান সংঘর্ষ। বিশেষ করে, ইয়াঙ্গুন শহর থেকে টেকনাফ বন্দরে পণ্য আমদানি গত তিন মাস ধরে পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
টেকনাফ স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা সোহেল উদ্দিন জানিয়েছেন, রাখাইন সীমান্ত আরাকান আর্মির দখলে যাওয়ায় সীমান্ত বাণিজ্যে ধস নেমেছে। সীমিত পরিসরে কেবল রাখাইনের মংডু শহর থেকে কিছু কাঠ আমদানি হচ্ছে এবং বাংলাদেশ থেকে আলু ও পানিসহ কিছু পণ্য রপ্তানি করা যাচ্ছে।
আমদানিকারকদের অভিযোগ, ইয়াঙ্গুন থেকে পণ্য আনতে হলে এখন আরাকান আর্মিকে আলাদা করে ট্যাক্স দিতে হচ্ছে, যা একধরনের অনিয়ম। সেক্ষেত্রে তারা দ্বিধায় পড়েছেন, কারণ মিয়ানমার সরকারের পাশাপাশি বিদ্রোহী গোষ্ঠীকেও কর দেওয়ার বিষয়টি জটিলতার সৃষ্টি করেছে।
টেকনাফ সিঅ্যান্ডএফ (ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং) এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহেতাশামুল হক বাহদুর জানান, সীমান্ত বাণিজ্য কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকা। তিনি জানান, সর্বশেষ গত ১৬ জানুয়ারি ইয়াঙ্গুন থেকে তিনটি জাহাজ আসার পথে আরাকান আর্মি তা রাখাইনের নাইক্ষ্যংদিয়া সীমান্তে আটকে দেয়। এরপর থেকেই ইয়াঙ্গুনের সঙ্গে আমদানি পুরোপুরি বন্ধ।
তিনি আরও বলেন, রাখাইন হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশে বাধা থাকলেও বিকল্প পথে, যেমন সেন্টমার্টিন হয়ে শাহপরীর দ্বীপে ঢোকার ব্যবস্থা করা গেলে আরাকান আর্মির বাধা এড়ানো সম্ভব হতে পারে। বর্তমানে নাফ নদীর ঘোলার চর জাহাজ চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি করছে।
টেকনাফ বন্দরের শ্রমিক আলী হোসাইন বলেন, সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ থাকায় কাজ না পেয়ে দিন কাটছে কষ্টে। এদিকে, বন্দর এলাকার হাইওয়ে সড়কের পাশের চা বিক্রেতা রহমত উল্লাহ জানালেন, বন্দরে লোকজন কমে যাওয়ায় ছোট ব্যবসায়ীরাও বিপাকে পড়েছেন।
রাখাইন অঞ্চলের সংঘাত ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর দখলে থাকা পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বাণিজ্য চরমভাবে ব্যাহত হয়েছে। ইয়াঙ্গুন থেকে আমদানি বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও সরকার—সবারই ক্ষতি হচ্ছে। এই সংকট সমাধানে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনার পাশাপাশি বিকল্প রুট ও নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা জরুরি।