ধূমকেতু শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে বিশাল আলোকিত লেজের কোনো মহাজাগতিক বস্তুর ছবি। তবে এবার যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার বিজ্ঞানীরা লেজহীন ও আলোহীন সাতটি ধূমকেতু শনাক্ত করার দাবি করেছেন। বিজ্ঞানীদের মতে, নতুন এই ধূমকেতুগুলো সাধারণ গ্রহাণুর মতো দেখতে হলেও ধূমকেতুর মতো আচরণ করে।
নাসার জ্যোতির্বিজ্ঞানী ডেভিড ফার্নোচিয়া জানান, নতুন শনাক্ত ধূমকেতুগুলোতে লেজের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এটি একটি রহস্যজনক ঘটনা। এমন ধরনের বস্তু আগেও শনাক্ত হয়েছিল। ২০১৭ সালে ওমুয়ামুয়া নামের একটি আন্তঃনাক্ষত্রিক বস্তু একইভাবে লেজবিহীন আচরণ করেছিল।
এখন পর্যন্ত মোট ১৪টি লেজহীন বা অন্ধকার ধূমকেতুর সন্ধান মিলেছে। সম্প্রতি পাওয়া সাতটি ধূমকেতুর তথ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
ধূমকেতু সাধারণত মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহের মধ্যে প্রধান-বেল্টে অবস্থান করে। এগুলো সক্রিয় গ্রহাণু নামেও পরিচিত। প্রধান-বেল্টে থাকা ধূমকেতুগুলোর লেজ স্পষ্টভাবে দেখা যায়, যা গ্যাস ও ধূলিকণার নির্গমনে তৈরি হয়। তবে অন্ধকার ধূমকেতুতে লেজের অস্তিত্ব নেই। মাধ্যাকর্ষণ ছাড়াও অন্যান্য শক্তি এদের গতির ওপর প্রভাব ফেলে, যার ফলে মাঝেমধ্যেই এদের গতিপথ পরিবর্তন করতে দেখা যায়।
মিশিগান স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ড্যারিল সেলিগম্যান জানিয়েছেন, দুই ধরনের অন্ধকার ধূমকেতুর সন্ধান পাওয়া গেছে:
১. সৌরজগতের বাইরের অন্ধকার ধূমকেতু: এগুলোর আকার শত শত মিটার জুড়ে বিস্তৃত।
২. সৌরজগতের ভেতরের অন্ধকার ধূমকেতু: এগুলো তুলনামূলক ছোট, প্রায় ১০ মিটার বা তার কম আকারের।
গবেষকরা মনে করছেন, পৃথিবীতে প্রাণের উৎপত্তি কীভাবে হয়েছে, তা বোঝার জন্য অন্ধকার ধূমকেতু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করতে পারে। এ ধরনের ধূমকেতুতে অনেক নতুন রহস্য লুকিয়ে থাকতে পারে। শক্তিশালী টেলিস্কোপের মাধ্যমে পৃথিবী থেকে এদের বিন্দু আকারে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব।
নাসার নতুন আবিষ্কৃত সাতটি অন্ধকার ধূমকেতু মহাকাশ গবেষণায় নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে।
সুত্র: প্রসেডিংস অব দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স