বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেছেন, শিক্ষাব্যবস্থায় সংস্কার অত্যন্ত জরুরি, তবে এখনো পর্যন্ত শিক্ষা খাতে কোনো কমিশন গঠন না করায় তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে একাডেমিক অধিকার লঙ্ঘন: প্রতিকারের নীতি সুপারিশ’ শীর্ষক আলোচনাসভায় অংশ নিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন।
অধ্যাপক আজম বলেন, “অবাক হয়ে লক্ষ করছি, সরকার প্রচুর কমিশন গঠন করেছে, কিন্তু শিক্ষা কমিশন করেনি।” তিনি আরও বলেন, “শিক্ষার গুণগত সংস্কার করতে হবে এবং এটা খুবই জরুরি ছিল। সরকার কেন এই সংস্কার কাজটি করেনি, তা বুঝতে পারছি না। কিন্তু শিক্ষার মানোন্নয়নই একমাত্র উপায়, এবং এটি করতে হবে।”
অধ্যাপক আজম শিক্ষা খাতে বাজেটের কম বরাদ্দের বিষয়টি কঠোরভাবে সমালোচনা করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, “ভারতীয় উপমহাদেশসহ অধিকাংশ দেশে শিক্ষায় জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে বর্তমানে শিক্ষায় বরাদ্দ মাত্র ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ, যা অতি কম।” তিনি আরো বলেন, “আপনি যদি ভারতের মতো ভালো বিশ্ববিদ্যালয় চান, তাহলে তাদের বাজেট ও শিক্ষকদের পরিমাণ দেখুন।”
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষকদের বেতন কম হওয়া, শিক্ষকের অভাব, এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নতি না হওয়া বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার বড় সমস্যা। “প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকদের বেতন মাত্র ১৭ হাজার টাকা। এই কম বেতনের কারণে শিক্ষকরা তাদের পূর্ণ শ্রম দিতে পারছেন না,” বলেন অধ্যাপক আজম।
তিনি সরকারের প্রতি আবেদন করেন, “শিক্ষার বাজেট অন্তত ৪ শতাংশ করতে হবে, এবং দীর্ঘমেয়াদি রোডম্যাপ তৈরি করে এটি বাস্তবায়ন করতে হবে।”
আলোচনাসভায় লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুশতাক খান বলেন, “শিক্ষাব্যবস্থা ঠিক না হলে বাংলাদেশে উন্নয়নের ভবিষ্যৎ নেই।” তিনি বলেন, “শিক্ষাব্যবস্থা নষ্ট হলে জাতির উন্নতি সম্ভব নয় এবং রাষ্ট্রের সংস্কারের এক নম্বর কাজ হবে শিক্ষা সংস্কার করা।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম এবং এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি মীর মোহাম্মদ জসিম শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তনে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেন।
এদিনের আলোচনাসভায় বক্তারা শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারের জন্য ১২ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে, শিক্ষা কমিশন গঠন, শিক্ষাক্রম প্রণয়ন ও পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন, মূল্যায়ন পদ্ধতির সংস্কার, শিক্ষা বাজেটে অগ্রাধিকার, গবেষণামূলক উচ্চশিক্ষা, নিয়োগ কমিশন গঠন, মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার, কারিগরি শিক্ষার মান বৃদ্ধি, শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও কাউন্সেলিং ব্যবস্থা, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য , ন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা, বুলিং ও র্যাগিং বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ।
এই প্রস্তাবনার মাধ্যমে তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়া, আয়োজক সংগঠন ‘কাউন্সিল ফর দ্য রাইটস অব একাডেমিয়া’র পক্ষ থেকে জানানো হয়, এটি একটি অলাভজনক, অরাজনৈতিক সংগঠন যা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার অধিকার নিয়ে কাজ করছে। আজকের এই আলোচনা সভার মাধ্যমে তারা শিক্ষার সংস্কারের জন্য প্রস্তাবনা তুলে ধরেছেন এবং আগামীতে আরও কার্যক্রম পরিচালনা করার পরিকল্পনা করেছে।