কুষ্টিয়ার শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিধন্য কুঠিবাড়ির ২০১ নম্বর কক্ষটি রহস্যজনক তরবারি চুরির ঘটনায় মামলা নিষ্পত্তি সত্ত্বেও টানা আট বছর ধরে সিলগালা অবস্থায় রয়েছে। এতে পর্যটক ও রবীন্দ্র-অনুরাগীরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
২০১৬ সালের ৩০ মার্চ কুঠিবাড়ির দোতলার ২০১ নম্বর কক্ষের আলমারিতে রক্ষিত পাঁচটি তরবারির মধ্যে ১৮ ইঞ্চি লম্বা দুইটি তরবারি চুরি হয়। ঘটনাটি সিসি ক্যামেরা ও নিরাপত্তার নজরদারি এড়িয়ে ঘটলেও পুলিশ এখনো পর্যন্ত তরবারিগুলো উদ্ধার করতে পারেনি।
চুরি যাওয়ার পর কুমারখালী থানায় মামলা হলে ২০১৮ সালে পুলিশ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন (ফাইনাল রিপোর্ট) দাখিল করে। তবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর পুলিশের প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে না-রাজি পিটিশন দাখিল করলে মামলাটি পুনরায় তদন্তের দায়িত্ব সিআইডিকে দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে সিআইডি পুলিশও কুমারখালী থানার তদন্ত প্রতিবেদনকে সঠিক বলে আদালতে দাখিল করে। এরপর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তৎকালীন কাস্টোডিয়ান মো. মখলেছুর রহমান কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিউ পিটিশন করেন, যা ২০২২ সালে আদালত খারিজ করে দেয়।
দফায় দফায় তদন্ত ও রিভিউ পিটিশন খারিজের পর মামলাটি উচ্চ আদালতে আর এগোয়নি। তবে মামলার নিষ্পত্তির পরও ২০১ নম্বর কক্ষটি এখনও তালাবদ্ধ ও সিলগালা অবস্থায় রয়েছে, এবং দর্শনার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
কুঠিবাড়ির কাস্টোডিয়ান আল-আমিন জানান, চুরি-সংক্রান্ত মামলাটি আদালতে খারিজ হয়ে যাওয়ার পর উচ্চ আদালতে নেওয়া হয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কক্ষটি এখনও তালাবদ্ধ রাখা হয়েছে।
দর্শনার্থী গোলাম সরওয়ার বলেন, “কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত কুঠিবাড়িতে রাখা তরবারি চুরির ঘটনা চরম মর্যদাহানিকর। এত বছর পরও তরবারিগুলো উদ্ধার হয়নি বা দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হয়নি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।”
স্থানীয়রা মনে করেন, মামলাটি পুনঃতদন্ত করা হলে তরবারি চুরি ঘটনার ক্লু উদ্ধারসহ জড়িতদের চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।
চুরি ঘটনার পর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। তবে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পরও চুরির রহস্য উদঘাটন হয়নি, এবং মামলাটি আলোর মুখ দেখেনি।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে কুঠিবাড়ির কড়া নিরাপত্তা বলয় ভেদ করে নাটকীয়ভাবে তরবারি চুরির ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের মতে, আবারও পুনঃতদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হলে এই রহস্যজনক চুরির সমাধান ও দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হবে।