দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সরকারি কর্মচারীদের বিদেশি নাগরিকত্ব এবং পাসপোর্ট গ্রহণের বিষয়টি অনুসন্ধানের উদ্যোগ নিয়েছে। এ লক্ষ্যে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, পুলিশের বিশেষ শাখা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বুধবার ঢাকার সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন এ তথ্য জানান।
দণ্ডবিধির ২১ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ২ নম্বর ধারা এবং ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ১১০ ধারাসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইনের আওতায় সরকারি কর্মচারীদের বিদেশি নাগরিকত্ব গ্রহণ নিষিদ্ধ।
এই বিধানের আওতায় রয়েছেন, প্রতিরক্ষা বিভাগের কমিশন্ড কর্মকর্তা, আদালতের বিচারক ও কর্মচারী, সরকারি রাজস্ব খাত থেকে বেতনভুক্ত কর্মচারী, স্বায়ত্তশাসিত, স্বশাসিত ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি।
দুদক মহাপরিচালক বলেন, এসব ব্যক্তি ‘পাবলিক সার্ভেন্ট’ হিসেবে বিবেচিত হন এবং আইন অনুযায়ী বিদেশি নাগরিকত্ব গ্রহণ তাঁদের জন্য সম্পূর্ণ অবৈধ।
আক্তার হোসেন জানান, সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কিছু সরকারি কর্মচারী তথ্য গোপন করে ভিন্ন দেশের পাসপোর্ট গ্রহণ ও ব্যবহার করছেন। তাঁরা অবৈধ সম্পদ গোপনে বিদেশে পাচার এবং ভোগ করার জন্য একাধিক পাসপোর্ট ব্যবহার করছেন। এ ধরনের কার্যকলাপ দুর্নীতি দমন আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ গোপনে বিদেশে পাচার করার উদ্দেশ্যে সরকারি কর্মচারীরা বিদেশি নাগরিকত্ব গ্রহণ করে থাকেন। এতে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং দুর্নীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কাছে সরকারি কর্মচারীদের নাগরিকত্ব ও পাসপোর্টের তথ্য চাওয়া হয়েছে। সন্দেহভাজন সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে তদন্ত চালাচ্ছে দুদক। সরকারি চাকরি আইন ৪০ ধারার আওতায় তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দুদক এই ধরনের কার্যকলাপ বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। বিদেশি নাগরিকত্ব গ্রহণ এবং পাসপোর্ট ব্যবহারের মাধ্যমে দুর্নীতির বিস্তার রোধে কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি।
সরকারি কর্মচারীদের বিদেশি নাগরিকত্ব গ্রহণ শুধু আইনবিরোধী নয়, বরং এটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সুশাসনের জন্য বড় প্রতিবন্ধক। দুদকের এই উদ্যোগ সরকারি প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।