নির্বাচন ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর, স্বচ্ছ এবং জনমুখী করতে নির্বাচন সংস্কার কমিশন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেছে। শনিবার (২৩ নভেম্বর) নির্বাচন ভবনে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও সম্পাদকদের সাথে বৈঠক শেষে কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার এসব তথ্য জানান।
বৈঠকে সরাসরি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব এসেছে। বদিউল আলম মজুমদার উল্লেখ করেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রত্যক্ষ হওয়া উচিত বলে অনেকেই মত দিয়েছেন। এটি গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করতে পারে। পাশাপাশি, স্থানীয় সরকার নির্বাচনও দলীয় রাজনীতির বাইরে রাখতে নির্দলীয়ভাবে আয়োজনের কথা বলা হয়েছে।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী নির্বাচিত হওয়া একটি বিতর্কিত ইস্যু। কমিশন এ বিষয়ে কড়া অবস্থান নিয়েছে। সুপারিশ করা হয়েছে যে, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিশ্চিত করতে আইনি সংস্কার প্রয়োজন।
“না ভোট” বা “নো ভোট” ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সুপারিশ এসেছে। এই ব্যবস্থাটি ভোটারদের তাদের অসন্তোষ প্রকাশের সুযোগ দেয়, যা নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করবে।
একটি কার্যকর নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক ঐক্যমতের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বদিউল আলম মজুমদার বলেন, কমিশনের সদস্যদের নির্বাচন ও নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হওয়া উচিত।
নির্বাচনে প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রসারকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিশেষত প্রবাসী ভোটারদের জন্য সহজতর ভোটদান প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে দেশের প্রায় এক কোটিরও বেশি প্রবাসী ভোটার নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সক্রিয় অংশ নিতে পারবেন।
কমিশনের আরেক সদস্য তোফায়েল আহমেদ উল্লেখ করেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন একযোগে আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ চলছে। এ উদ্যোগ সময় ও ব্যয় কমানোর পাশাপাশি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সমন্বয় উন্নত করবে।
বৈঠকে উপস্থিত গণমাধ্যমের সিনিয়র সাংবাদিকরা বিগত সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের অভিজ্ঞতা এবং চ্যালেঞ্জ নিয়ে মতামত দেন। তারা জানান, নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা এবং ভোটারদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ প্রয়োজন।
নির্বাচনী সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়িত হলে, ভোটের প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি পাবে, দলীয় প্রভাবমুক্ত স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিশ্চিত হবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব হবে। প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করে তাদের দেশের রাজনীতিতে সক্রিয় করা যাবে।
নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারে প্রস্তাবিত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন হলে গণতন্ত্র আরও সুসংহত হবে। তবে, এসব সুপারিশ কার্যকর করার জন্য রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন ও সুশীল সমাজের একযোগে উদ্যোগ প্রয়োজন। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্তিশালীকরণই হবে একটি কার্যকর ও সুশাসিত রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি।