সিরাজগঞ্জে কয়েকদিন ধরে তীব্র শীতের প্রকোপে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। সূর্যের দেখা মিলছে না বললেই চলে। বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সকালে জেলার তাপমাত্রা নেমে যায় ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে। তীব্র শীত ও হিমেল বাতাসে সাধারণ মানুষ তাদের নিত্যদিনের কাজকর্মে ব্যাপক বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন।
যমুনা চরের অসহায় মানুষজন শীত নিবারণের পর্যাপ্ত পোশাকের অভাবে ভাঙ্গা ঘরে আশ্রয় নিচ্ছেন। খড়-কুটো জ্বালিয়ে শীত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন। মেছরা চরের হতদরিদ্র হামিদা, রহিমা ও আশা খাতুন জানান, কয়েক দিনের শীতে তারা অত্যন্ত কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। কুয়াশা ও ঠাণ্ডা বাতাসে ঘরের বাইরে বের হওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
ঘন কুয়াশা এবং শীতের কারণে যানবাহন চলাচলে বিপত্তি দেখা দিয়েছে। জেলার বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কে যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে চলাচল করতে হচ্ছে। সিএনজি অটোরিকশাচালক লতিফ জানান, কুয়াশার কারণে প্রায়ই সামনে কিছু দেখা যায় না।
এদিকে, শীতের তীব্রতায় কৃষিকাজও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সদর উপজেলার চররায়পুর গ্রামের কৃষক বারেক আলী জানান, ঠাণ্ডা বাতাস উপেক্ষা করেও তাকে বেগুন ও মরিচের খেতের পরিচর্যা করতে হচ্ছে। অতিরিক্ত কুয়াশার ফলে ফসলের ফুল পচে গিয়ে ফলন কমে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
নৌকার মাঝি সোবাহান জানান, ঘন কুয়াশার কারণে নদীর মধ্যে দিক ঠিক রাখা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেক সময় নৌকা চরে আটকে যায়। এতে একদিকে যেমন সময়ের অপচয় হয়, তেমনি দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়ে।
প্রচণ্ড শীতের কারণে শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের মানুষের মধ্যে শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। সিরাজগঞ্জ মেডিনোভা হাসপাতালের পরিচালক ডা. আকরামুজ্জামান জানান, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে অধিকাংশই ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় ভুগছেন। এর মধ্যে শিশুদের সংখ্যা বেশি।
তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় সিরাজগঞ্জের জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। যমুনা চরের দরিদ্র মানুষের পাশাপাশি কৃষক ও পরিবহন চালকেরাও বিপাকে পড়েছেন। এ পরিস্থিতিতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ত্রাণ কার্যক্রম এবং শীতবস্ত্র বিতরণ জরুরি হয়ে পড়েছে।