শেয়ারবাজারের লেনদেন নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া ঝুঁকিমুক্ত ও দ্রুত সম্পন্ন করতে ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিসিবিএল) কর্মকাণ্ড নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। সিসিবিএল প্রতিষ্ঠার চার বছর পরও কার্যক্রম শুরু করতে না পারায় এর স্বচ্ছতা ও সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সিসিবিএল প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল শেয়ারবাজারে লেনদেন নিষ্পত্তি ঝুঁকিমুক্ত করা এবং কার্যক্রমে গতিশীলতা আনা। তবে সংস্থাটি এখনো কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। দীর্ঘদিন ধরে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগসহ অন্যান্য প্রশাসনিক সমস্যার কারণে এর কার্যক্রমে অগ্রগতি হয়নি।
ডিএসইর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সিসিবিএল বর্তমানে সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি (সিসিপি) প্রযুক্তি কেনার উদ্যোগ নিলেও ডিএসই এ প্রক্রিয়ার ওপর আপত্তি জানিয়েছে। ডিএসইর মতে, বিপুল অর্থ খরচ করে নতুন প্রযুক্তি কেনার পরিবর্তে বিদ্যমান প্রযুক্তি ব্যবহার করেই যৌথভাবে কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ রয়েছে।
সিসিবিএলের পর্ষদ গঠনে দীর্ঘ সময় লেগেছে। স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগেই ৫৩৫ দিন পেরিয়ে গেছে। এ ছাড়া ডিএসই, সিএসই এবং সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) থেকে পর্ষদ সদস্য নিয়োগে বিলম্ব হওয়ায় ১১৮ দিন পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে কার্যক্রম শুরু করার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়েছে।
সিসিবিএল সম্প্রতি ভারতের টাটা কনসালট্যান্সির সঙ্গে সিসিপি প্রযুক্তি স্থাপনের চুক্তি করার উদ্যোগ নেয়। তবে ডিএসই এই চুক্তি পর্যালোচনা করার জন্য অনুরোধ জানায়। ডিএসইর সভাপতি মমিনুল ইসলাম বলেন, “সিসিবিএল ও ডিএসই যৌথভাবে কাজ করতে পারে। নতুন প্রযুক্তি কিনতে যে বিপুল অর্থ ব্যয় হবে, তা যৌথ ব্যবস্থাপনায় এড়ানো সম্ভব।”
অন্যদিকে, সিসিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফরহাদ আহমেদ বলেছেন, “ডিএসইর অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা পর্ষদ সভায় আলোচনা করে সুনির্দিষ্ট জবাব দিয়েছি। আশা করছি, আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে।”
সিসিবিএলের মালিকানায় রয়েছে ডিএসই, সিএসই, সিডিবিএল এবং ১২টি ব্যাংক। এর মধ্যে ডিএসইর শেয়ার ৪৫ শতাংশ, সিএসই ও সিডিবিএলের ২০ শতাংশ করে এবং বাকি ১২টি ব্যাংকের শেয়ার ১৫ শতাংশ। ডিএসই ছাড়া অন্য কোনো শেয়ারহোল্ডার সিসিবিএলের কর্মকাণ্ড নিয়ে আপত্তি তোলেনি।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, সিসিবিএলের কার্যক্রমে অগ্রগতি আনতে ডিএসইর আপত্তি ও সিসিবিএলের অবস্থানের সমন্বয় করা জরুরি। প্রয়োজনে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মধ্যস্থতায় বিষয়টির সমাধান হতে পারে।
সিসিবিএল কার্যক্রম শুরু হলে শেয়ারবাজারের লেনদেন নিষ্পত্তি ঝুঁকিমুক্ত হবে এবং সময়ও কমবে। এটি শেয়ারবাজারের কার্যক্রমে নতুন গতিশীলতা আনতে সহায়ক হবে।
সিসিবিএলের প্রশাসনিক ও কারিগরি জটিলতার সমাধান শেয়ারবাজারের স্বার্থে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডিএসই ও সিসিবিএল যৌথ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজে বের করবে বলে আশা করা হচ্ছে।