মহাকাশের অজানা রহস্যের মাঝে এক বিস্ময়কর ঘটনা জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের চমকে দিয়েছে। সম্প্রতি, সূর্যের চেয়ে ১৫০ গুণ বড় একটি তারার অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করেছেন বিজ্ঞানীরা, যা তাদের তাত্ত্বিক ধারণার থেকে অনেকটা ভিন্ন। এই বিশাল তারাটি মাঝেমধ্যে একধরনের ঝাঁকুনি বা ‘হেঁচকি’ মতো আচরণ করে, যা বিজ্ঞানীজরা ‘পালসেশনাল পেয়ার ইনস্টেবিলিটি’ (PPI) প্রক্রিয়া হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তাদের মতে, এই প্রক্রিয়ায় তারার কেন্দ্র খুবই উত্তপ্ত থাকে এবং তারাটি জীবন শেষের দিকে পৌঁছলে ধীরে ধীরে সংকুচিত এবং প্রসারিত হতে থাকে। প্রতিটি স্পন্দনের সাথে তারার উপাদান মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে, যা একে অপরের সাথে সংঘর্ষে তীব্র আলো সৃষ্টি করতে পারে। তবে, এই ধরনের সংঘর্ষ চূড়ান্ত সুপারনোভা বিস্ফোরণের তুলনায় অনেক কম ক্ষীণ, যার কারণে তত্ত্বের প্রমাণ আগে পাওয়া সম্ভব হয়নি।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে, মহাকাশের এনজিসি ২৯৮১ নামক সর্পিল ছায়াপথে নতুন একটি উজ্জ্বল সুপারনোভা শনাক্ত করা হয়, যার নাম এসএন২০২০এসিসিটি। এটি খুব দ্রুত অদৃশ্য হয়ে যায়, তবে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ছায়াপথের একই অঞ্চল থেকে দ্বিতীয়বার আলো আবির্ভূত হয়। এই ঘটনাটি অত্যন্ত অস্বাভাবিক ছিল, কারণ সুপারনোভা থেকে কখনো দ্বিতীয়বার আলো আসার ঘটনা ঘটে না।
হাওয়াই, চিলি, দক্ষিণ আফ্রিকা ও যুক্তরাষ্ট্রের টেলিস্কোপ দ্বারা এই মহাজাগতিক ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করা হয়। প্রথম আলো আবির্ভূত হওয়ার পর কিছু সময় পর তা ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেলেও, কিছু সময় পর আবার নতুন করে আলো দেখা যায় এবং তার পরে দ্রুত প্রসারণ ঘটতে থাকে।
কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ম্যাট নিকোল বলেন, “এখনো আমরা এই বিশাল তারাটি সম্পর্কে অনেক কিছু জানি না, তবে এই ধরনের স্পন্দনশীল আলোকচ্ছটা মহাজাগতিক ক্ষেত্রে আমাদের জ্ঞানের একটি বড় পদক্ষেপ।”
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এই অস্বাভাবিক আচরণের মাধ্যমে তারা মহাজাগতিক সৃষ্টির প্রক্রিয়া এবং সুপারনোভা বিস্ফোরণ সম্পর্কিত নতুন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে সক্ষম হবেন।