চলতি বছরের ৩ মার্চ ভারতের বেঙ্গালুরুর বিমানবন্দর থেকে কন্নড় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী রান্যা রাও গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তারের সময় তার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় ২ কোটি ৬৭ লক্ষ রুপি নগদ অর্থ ও ২ কোটিরও বেশি মূল্যের সোনা। উদ্ধারকৃত এই অর্থ ও সোনার কোনো বৈধ রসিদ বা উৎসের তথ্য দিতে পারেননি অভিনেত্রী।
পরবর্তীতে দুবাইয়ের শুল্ক দপ্তর জানায়, ২০২৩ সালের নভেম্বরে ও ডিসেম্বরে রান্যা রাও দুবাই থেকে সোনা ক্রয় করেছিলেন এবং তা জেনেভায় নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। তবে তদন্তে দেখা যায়, তিনি সোনা নিয়ে ভারতে ফিরে আসেন, যা স্বর্ণ চোরাচালান আইনে গুরুতর অপরাধ।
বর্তমানে রান্যা রাও স্বর্ণ চোরাচালানের মামলায় বেঙ্গালুরুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিদেশি মুদ্রা সংরক্ষণ ও চোরাচালান প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী মামলা করা হয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক গোয়েন্দা ব্যুরো (CEIB) রাজস্ব গোয়েন্দা অধিদপ্তরের (DRI) সুপারিশের ভিত্তিতে এই আইন প্রয়োগ করেছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, এই আইনের আওতায় গ্রেফতার ব্যক্তিরা সাধারণত এক বছরের মধ্যে জামিন পান না। কারণ, জামিনে মুক্তি পেলে তারা পুনরায় চোরাচালানে জড়িয়ে পড়তে পারেন।
সূত্রমতে, রান্যা রাওসহ মামলার অন্যান্য অভিযুক্ত তরুণ রাজু ও সাহিল সাকারিয়া জৈনের বিরুদ্ধেও একই আইন প্রয়োগ করা হয়েছে। তারা বারবার জামিন আবেদন করলেও তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, রান্যা রাও কর্ণাটকের জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা রামচন্দ্র রাওয়ের সৎকন্যা। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে ১৪.২ কেজি সোনা উদ্ধার করা হয়, যার বাজারমূল্য প্রায় ১২.৫৬ কোটি রুপি।
এছাড়া, তদন্তকারী সংস্থা ডিআরআই, ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট) ও সিবিআই এই মামলার তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। রাজ্য সরকারও ডিজিপি রামচন্দ্র রাওয়ের সম্পৃক্ততার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একজন সিনিয়র আইএস অফিসারের নেতৃত্বে একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
ডিআরআইয়ের তদন্তে আরও উঠে এসেছে যে, রান্যা রাও ও সাহিল সাকারিয়া জৈন একটি হাওয়ালা চক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাদের মাধ্যমে ৪৯.৬ কেজি সোনা বিক্রি করে প্রায় ৩৮.৪ কোটি রুপির হাওয়ালা অর্থ দুবাইয়ে পাঠানো হয়। হাওয়ালা হলো একটি অবৈধ আর্থিক লেনদেন প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে সাধারণত কালো টাকা মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য দেশে স্থানান্তর করা হয়।
এই চাঞ্চল্যকর মামলায় দেশজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। তদন্ত চলছে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।