বুধবার (১২ মার্চ) হাইকোর্টের বিচারপতি রাজিক আল জলিল ও বিচারপতি সাথীকা হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এক ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া কেউ নামের আগে "ডাক্তার" পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না। আদালত আরও জানিয়েছে, আগামী বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) থেকে আইন ভঙ্গ করে ডাক্তার পদবি ব্যবহারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই রায়টি একটি দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার পর আসে। ২০১৩ সালে ডিএমএফ ডিগ্রিধারী সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসাররা (স্যাকমো) বিএমডিসি আইনকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে রিট দায়ের করেন, যাতে তারা নামের আগে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারেন। সেই সময় থেকেই এই রিটটি আদালতে কয়েকবার শুনানির জন্য আসে, তবে নানা কারণে শুনানি পিছিয়ে যায়। সর্বশেষ, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি, দুটি রিটের শুনানি হয়েছিল, এবং আজ বুধবার হাইকোর্ট রায় দেয়।
হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, এমবিবিএস এবং বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া কেউ ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবে না। তবে, যারা এই পদবি ব্যবহার করে এসেছেন, তাদের বিরুদ্ধে বর্তমান সময়ে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তবে বৃহস্পতিবার থেকে যদি কেউ আইন অমান্য করে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ রায় ঘোষণার পর চিকিৎসক এবং মেডিকেল শিক্ষার্থীরা পাঁচ দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে মহা সমাবেশে যোগ দেন। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের চিকিৎসক এবং মেডিকেল শিক্ষার্থীরা সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অভিমুখে পদযাত্রা করেন।
সমাবেশের আওতায় সারা দেশের মেডিকেল ও ডেন্টাল শিক্ষার্থীরা সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন, এবং সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোর সেবা বন্ধ রয়েছে। তবে হাসপাতালের জরুরি সেবা, বিশেষ করে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ), করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ), ক্যাজুয়ালটি বিভাগ এবং লেবার ওয়ার্ড চালু থাকবে।
চিকিৎসকরা জানান, তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, জনসাধারণকে অপচিকিৎসার হাত থেকে রক্ষা করা, স্বাস্থ্য খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং চিকিৎসা পেশায় মর্যাদা রক্ষা করা। তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চলমান আমলাতান্ত্রিক কূটকৌশলের প্রতিবাদে এই কর্মসূচি ডেকেছেন।
এ রায়ের পরবর্তী কার্যক্রম এবং এর প্রভাব দেশে স্বাস্থ্য সেবার মান এবং চিকিৎসক পেশার মর্যাদার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।