গ্রামের কৃষক পরিবারে হেমন্তের আগমন মানেই নতুন ধানে নবান্নের আনন্দ। সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার গ্রামাঞ্চলে এই সময়ে চলছে আমন ধান কাটা, যা বছরের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এটি শুধু কৃষকের জন্য নয়, সারা গ্রামের জন্য একটি বিশেষ উৎসবের সময়। সারা দিন মাঠে কাজ করে কৃষকরা তাদের পরিবার নিয়ে নতুন ধান ঘরে তোলার কাজে ব্যস্ত থাকে।
এ বছর সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় বিশেষত কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার খাগাইল গ্রামে আমন ধানের ফলন ভালো হয়েছে। কৃষকরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে কাজ করছে, এবং এই সময়টি তাদের জীবনে এক নতুন আশা নিয়ে আসে। গ্রামাঞ্চলে ধান কাটা, মাড়াই, শুকানো, এবং খলায় ধান ঝাড়া—এই কাজগুলো একত্রে গ্রামের প্রতিটি মানুষের দিনযাত্রা হয়ে ওঠে।
হেমন্তে সিলেটের গ্রামে মাঠে কাজ করতে যাওয়া মানুষের মধ্যে আনন্দের ছাপ স্পষ্ট। আমন ধান কাটার সময় যখন কৃষকরা খেতের মধ্যে কাজ করতে থাকে, তখন তাদের বাড়ির ছোট-বড় সবাই অংশ নেয়। কেউ ধান কেটে, কেউ মাড়াই করে, আবার কেউ ঝাড়ে শুকানোর কাজ করে। সাধারণত, ধান কাটা শুরু হয় ভোরে এবং মাড়াই ও শুকানোর কাজ চলে পড়ন্ত বিকেল পর্যন্ত। এই সময়ে গ্রামাঞ্চলে কর্মব্যস্ততার পাশাপাশি, সামাজিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়, কারণ সবাই একত্রিত হয়ে কাজ করে।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার খাগাইল গ্রামের কৃষকরা খুবই কর্মঠ এবং কঠোর পরিশ্রমী। তারা জানেন, নতুন ধান ঘরে তোলার সময়টি তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানকার মাটি এবং আবহাওয়া আমন ধানের জন্য অত্যন্ত উপযোগী, তাই প্রতিবছর এখানে ভালো ফলন হয়। সিলেটের এই অঞ্চলের কৃষকরা বছরের পর বছর ধরে এই ধান কেটে মাড়াই করে তাদের পরিবারকে সুরক্ষিত রাখে এবং সারা বছর সুশৃঙ্খলভাবে খাদ্য সরবরাহের নিশ্চয়তা দেয়।
গ্রামে কৃষকদের জন্য নতুন ধান কাটার পরে নবান্নের আনন্দ এক অদ্বিতীয় অভিজ্ঞতা। এই সময়টা তাদের জন্য যেমন অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা, তেমনি সামাজিক আনন্দের। আমন ধানের ফসল তুললে তা শুধু তাদের দৈনন্দিন খাদ্য সংকট মেটায় না, বরং বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করেও তারা কিছুটা উপার্জন করতে পারে। সিলেটের গ্রামীণ সমাজে এই সময়টায় পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে এক সামাজিক বন্ধন তৈরি হয়, যারা একে অপরকে সাহায্য করে এবং খুশি ভাগাভাগি করে নেয়।
খাগাইল গ্রামে কৃষকরা ধান কেটে মাড়াই করে, এরপর খলায় ধান ঝাড়া এবং শুকানোর জন্য বিভিন্ন প্রাকৃতিক পদ্ধতি ব্যবহার করে। এই কাজগুলো করে তারা ফসলকে সংরক্ষণ করতে পারে এবং এক বছরের জন্য খাদ্য প্রস্তুত করে। এলাকার কৃষকরা জানে, যদি এই কাজ সঠিকভাবে করা যায়, তবে তাদের কৃষিকাজ সফল হবে এবং সারা বছর তারা ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারবে।
হেমন্তে ধান কাটা নিয়ে সিলেটের কৃষকদের মধ্যে এক ধরনের উচ্ছ্বাস থাকে, যা পুরো গ্রামীণ সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার খাগাইল গ্রামে হেমন্তের এই সময়টায় ঐতিহ্যবাহী কৃষিকাজের পাশাপাশি সমাজের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কেরও বিশেষ গুরুত্ব থাকে। কৃষকরা জানে, এই সময়ের কাজ সম্পন্ন হলে তাদের পরবর্তী বছরের জীবিকা এবং পরিবারকে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব।
বিশেষত, আমন ধানের ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে আনন্দ ও শান্তির ছোঁয়া ছিল, যেহেতু তারা জানে যে নতুন ধান ঘরে তোলার পর তাদের জীবনযাত্রা আরও সহজ হবে। সিলেটের গ্রামে এই সময়ে এক অদ্ভুত শান্তি থাকে, যেখানে সবাই নিজের কাজ করতে থাকে এবং এর মাধ্যমে কৃষি কাজের প্রতি ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা প্রকাশ পায়।
গ্রামের কৃষক পরিবারগুলোর জন্য হেমন্তের আগমন মানে নতুন ধানের উৎসব। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার খাগাইল গ্রামের কৃষকরা এই সময়ে একত্রিত হয়ে একে অপরকে সাহায্য করে, তাদের ধান কেটে ঘরে তোলে এবং প্রাকৃতিক পরিবেশে তা শুকানোর কাজ করে। নতুন ধানের ফলে কৃষকেরা যেমন তাদের খাদ্য সংকট পূর্ণ করে, তেমনি সামাজিকভাবে একটি আনন্দমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। এইভাবে, সিলেটের গ্রামীণ জীবন এবং কৃষি ঐতিহ্য নতুন ধানে নবান্নের আনন্দ নিয়ে এগিয়ে চলে।