১৫ বছর পর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের ষষ্ঠ দফা দ্বিপাক্ষিক বৈঠক। এ বৈঠকে দু’দেশের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাগত ও কৌশলগত সহযোগিতা পুনরুজ্জীবিত করার জন্য একটি যৌথ সংকল্প গৃহীত হয়েছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তান সরকার।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) ঢাকায় এই ঐতিহাসিক বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন নিজ নিজ দেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।
বৈঠকে উভয় দেশ শিক্ষা, বাণিজ্য, কৃষি, সংযোগ, সাংস্কৃতিক বিনিময় ও কৌশলগত সম্পর্ক উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে। করাচি ও চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু এবং ভবিষ্যতে সরাসরি বিমান যোগাযোগ চালুর বিষয়েও আলোচনা হয়।
পাকিস্তান তার কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব রাখে, অন্যদিকে বাংলাদেশ মৎস্য ও সামুদ্রিক শিক্ষায় কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদানের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বৃত্তি পাওয়ার সম্ভাবনাকে ইতিবাচকভাবে দেখা হয়েছে।
বাংলাদেশে পাকিস্তানি শিল্পীদের সাম্প্রতিক পরিবেশনার প্রশংসা করে উভয় পক্ষ সংস্কৃতি, ক্রীড়া এবং গণমাধ্যমে যৌথ কর্মসূচি পরিচালনার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছে।
উভয় পক্ষ দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) পুনরুজ্জীবনের প্রয়োজনীয়তা পুনর্ব্যক্ত করেছে। তারা একমত হন যে, সার্ক যেন দ্বিপাক্ষিক রাজনৈতিক বিবেচনা থেকে মুক্ত থাকে।
পাকিস্তান বাংলাদেশের পক্ষকে কাশ্মীর পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করে এবং জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুযায়ী শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানায়। উভয় দেশ গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়ে ফিলিস্তিনের মানুষের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন-এর সঙ্গেও আলাদা আলোচনা হয়। আলোচনায় আঞ্চলিক সংহতি, বহিরাগত চাপ থেকে মুক্ত থেকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার গুরুত্ব উঠে আসে।
বৈঠকে পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিনেটর ইসহাক দার-এর সম্ভাব্য বাংলাদেশ সফর নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করা হয়। উষ্ণ আতিথেয়তার জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে, পাকিস্তানি পররাষ্ট্র সচিব পরবর্তী পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক ২০২৬ সালে ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান।