চন্দ্র বিজয়ের প্রায় ৫৬ বছর পর প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে চাঁদে নভোযান পাঠাতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। আগামীকাল (বুধবার) ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে রওনা দেবে নাসার প্রথম বাণিজ্যিক রোবটিক ল্যান্ডার ‘ব্লু ঘোস্ট’। এই অভিযানের মাধ্যমে চাঁদে মানুষের স্থায়ী বসতি স্থাপনের নতুন দ্বার উন্মোচন করতে চায় নাসা।
নাসার এই বাণিজ্যিক অভিযানের অংশীদার হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি অ্যারোস্পেস প্রতিষ্ঠান ফায়ারফ্লাই অ্যারোস্পেস। তাদের তৈরি রোবটিক ল্যান্ডারটির নাম ‘ব্লু ঘোস্ট’, যা স্পেসএক্সের তৈরি ‘ফ্যালকন ৮’ রকেটের মাধ্যমে চাঁদের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে।
এটি চন্দ্রপৃষ্ঠে প্রায় ৪৫ দিন কাটাবে এবং সেখানে নাসার পক্ষ থেকে অন্তত ১০টি বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান চালাবে।
ব্লু ঘোস্টের বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানগুলো চাঁদের পরিবেশ ও মহাবিশ্বের বিভিন্ন প্রভাব সম্পর্কে নতুন তথ্য প্রদান করবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমগুলো হলো, চাঁদে ভবিষ্যতে মানুষের সম্ভাব্য বসতি স্থাপনের সম্ভাবনা যাচাই, চাঁদের ভূতাত্ত্বিক গঠন বিশ্লেষণ, মহাবিশ্বের আবহাওয়া ও মহাজাগতিক শক্তির প্রভাব পর্যালোচনা, নাসার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চাঁদ এবং পৃথিবীর ওপর মহাজাগতিক শক্তির প্রভাব নির্ধারণ করাও এ অভিযানের অন্যতম উদ্দেশ্য।
ব্লু ঘোস্টের বৈশিষ্ট্য, উচ্চতা: ৬.৬ ফুট, প্রস্থ: ১১.৫ ফুট, এই ল্যান্ডারটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এবং এটি কঠিন চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবে।
১৯৬৯ সালে প্রথমবারের মতো চাঁদে সফলভাবে মানুষ পাঠিয়েছিল নাসা। অ্যাপোলো ১১ মিশনে অংশ নিয়ে চাঁদে পা রাখেন নাসার তিন নভোচারী নীল আর্মস্ট্রং, অ্যাডউইন অলড্রিন এবং মাইকেল কলিন্স। এই মিশনই বিশ্বকে প্রথমবারের মতো চাঁদে মানুষের বিজয়ের সাক্ষী করেছিল।
এখন পর্যন্ত বিশ্বের মাত্র পাঁচটি দেশ সফলভাবে চাঁদে মহাকাশযান পরিচালনা করতে পেরেছে। দেশগুলো হলো, সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, জাপান।
নাসা জানিয়েছে, ব্লু ঘোস্ট মিশন সফল হলে ভবিষ্যতে আরও বাণিজ্যিক মিশন পরিচালনা করবে তারা। এ ধরনের অভিযান পৃথিবীর বাইরে মানুষের টিকে থাকার সম্ভাবনা ও মহাকাশ গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
বাণিজ্যিক মহাকাশ অভিযানের এই উদ্যোগ মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে নতুন অধ্যায় যোগ করবে। ৫৬ বছর পর নাসা যখন আবার চাঁদের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করছে, তখন পুরো বিশ্ব তাকিয়ে আছে এই মিশনের সফলতার দিকে। ব্লু ঘোস্ট মিশনের সফলতা চাঁদে মানুষের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা এবং মহাকাশ গবেষণার পরবর্তী ধাপ নির্ধারণ করবে।