দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা খুলনার ফুলবাড়ীগেট মিরেডাঙ্গায় অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী সোনালী জুট মিলস্ আবারও নতুন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। শ্রমিকদের মানবেতর জীবনযাপনের অবসান ঘটাতে এবং শিল্পাঞ্চলের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে, ব্যক্তি উদ্যোগে এম এম এস ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানটি এই মিল পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত নেয়।
২৬ এপ্রিল শনিবার, আনুষ্ঠানিকভাবে মিলের কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন মিলের ডাইরেক্টর শেখ মিঠুনের পিতা শেখ ইকতার হোসেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মিলের মালিকপক্ষ ও কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং শ্রমিক কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানিয়েছে, একসময়ে "শিল্পনগরী" খ্যাত খুলনা আজ মৃতপ্রায়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সীমাহীন দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে একের পর এক শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। উল্লেখযোগ্যভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছিল, কাপেটিং জুট মিলস্, জে জে আই জুট মিলস্, ইস্টার্ন জুট মিলস্, আলিম জুট মিলস্, দৌলতপুর জুট মিলস্, খালিশপুর জুট মিলস্, দি ক্রিসেন্ট জুট মিলস্, পিপলস জুট মিলস্, প্লাটিনাম জুবলি জুট মিলস্, ষ্টার জুট মিলস্, খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলস্ লিমিটেড ইত্যাদি।সরকারি ৯টি জুট মিলসহ বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান দুর্নীতির করালগ্রাসে বন্ধ হয়ে পড়ে।
পরবর্তীতে ব্যক্তি উদ্যোগে লিজের মাধ্যমে কিছু মিল আংশিকভাবে চালু হলেও, অধিকাংশই টিকে থাকতে ব্যর্থ হয়। বর্তমানে সোনালী জুট মিলস্ পুনরায় চালু হওয়ায় শ্রমিকদের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে।
মিল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে সুতা উৎপাদন দিয়ে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। ধীরে ধীরে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, এম এম এস ট্রেডিং এর প্রোপাইটর শেখ মিঠুন হোসেন, মনির হোসেন, আবদার হোসেন সেলিম, ডাইরেক্টর নাজমুল হাসান চুন্নু, ম্যানেজার মোঃ জিয়াউল রহমান, একাউন্টেন্ট মিজানুর রহমান, উৎপাদন কর্মকর্তা এনামুল কবির, কোয়ালিটি কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহাগ হোসেন, দিঘলিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ শহিদুল ইসলাম, সামাজিক ব্যক্তিত্ব রশিদ শেখ, সেলিমুল ইসলাম সেলিম মোড়ল, শেখ হুমায়ূন কবির, সাকিব খান, রিপন শেখ, কালাম শেখ প্রমুখ। এছাড়াও শ্রমিক কর্মচারী ও বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
মালিকপক্ষের মতে, ব্যক্তি উদ্যোগে জুট মিল পরিচালনা করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। সোনালী জুট মিলস্-সহ খুলনার অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলিকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারি সহযোগিতা অপরিহার্য। তারা শিল্প খাতের উন্নয়ন ও টেকসই ভবিষ্যতের স্বার্থে নীতিগত ও আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
খুলনার সোনালী জুট মিলস্-এর পুনরায় চালু হওয়া খুলনার অর্থনীতিতে নতুন গতি আনবে বলে আশা করা হচ্ছে। শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন এবং স্থানীয় অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এরকম উদ্যোগগুলো আরো বাড়ানো জরুরি।