বাংলাদেশ হকি তার দীর্ঘ ইতিহাসে এক সময়ে এশিয়ায় অন্যতম শক্তিশালী দল ছিল। প্রায় চার দশক ধরে এশিয়া কাপ হকিতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করে আসছিল বাংলাদেশ, কিন্তু এবার, ২০২৪ সালে, ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। এশিয়া কাপ হকির সেমিফাইনালে ওমানের কাছে পরাজিত হয়ে বাংলাদেশের হকি দল এশিয়া কাপের স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে। সেমিফাইনালে পরাজয়ের ফলে এশিয়া কাপ হকিতে যোগ্যতা অর্জন করা হয়নি বাংলাদেশের।
এটা বাংলাদেশের হকির জন্য এক বড় লজ্জা। গত কয়েক বছর ধরে হকি ফেডারেশন সভাপতি হাসান মাহমুদ খাঁন হকির উন্নয়নে আন্তরিকভাবে কাজ করলেও, বাংলাদেশ হকি বর্তমানে বিপদে পড়েছে। এসব বিতর্কের মধ্যে, ক্রিকেটের মতো জনপ্রিয় খেলার কাছে হকি অনেকটা অবহেলিত হয়ে পড়েছে।
এশিয়া কাপ হকিতে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি সঠিক ছিল না, এ বিষয়ে অভিযোগ উঠছে। সাবেক অধিনায়ক আব্দুস সাদেক বলেছেন, ‘এভাবে ভালো থাকা যায় না, সঠিক প্রস্তুতি ছাড়া এইভাবে খেলতে যায় না’। তিনি বলেন, ‘শুনলাম ফেডারেশনের সেক্রেটারি নাকি বলেছেন টাকা ছিল না, তাই প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলা হয়নি। কিন্তু এটা কি হয়? দেশের হকি এমনভাবে চলে না।’
এছাড়া, তারকা খেলোয়াড় রাসেল মাহমুদ জিমি এই দলের সদস্য না হওয়ায় ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সাদেক বলেন, ‘জিমি এই সেঞ্চুরির বেস্ট প্লেয়ার, গত ২০ বছরেও এমন খেলোয়াড় আসেনি। তার ট্রায়াল না ডাকার মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে আছি কেন?’
হকি ফেডারেশন বিভিন্ন সময়ে তাদের দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যা ও সংকটের মুখোমুখি হয়েছে, তবে এবার যে অরাজকতা দৃশ্যমান হয়েছে, তা অনেকের জন্যই অপ্রত্যাশিত ছিল। ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ও সার্চ কমিটি গঠন করেছিল, কিন্তু এর পরিণতি কিছুটা অন্ধকারেই পড়েছে। বিশেষ করে হকির জাতীয় দলের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে উঠেছে।
তবে, ফেডারেশন সভাপতির আন্তরিকতা সত্ত্বেও, সমস্যা সমাধানের পথ এখনও দূরত্বে রয়েছে। ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ হকি দলকে চেনা পরিচিতি মিললেও, বর্তমানে পারফরম্যান্সের অভাব এবং সংগঠনের দুর্বলতায় জাতীয় দলের ধারাবাহিক সাফল্য হারিয়ে যাচ্ছে।
প্রশ্ন উঠে আসে, দেশের হকির ভবিষ্যৎ কী হবে? অবৈধভাবে খেলা পরিচালনার অনিয়ম এবং দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে বাংলাদেশ হকি তার সম্মান পুনরুদ্ধার করতে পারবে কি না, তা এখন বড় প্রশ্ন। তবে যদি সমস্যা চিহ্নিত করা যায় এবং দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, তাহলে জাতীয় দলকে আবারও উজ্জীবিত করা সম্ভব।
এখন, জরুরি পদক্ষেপের দিকে নজর দিতে হবে, যাতে আগামী দিনে বাংলাদেশের হকি আবারও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রভাব বিস্তার করতে পারে।