বাম ও ডানপন্থী নেতৃত্বের একটি অংশ নিজেদের অভ্যুত্থান ও সরকারের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়ে উন্মত্ত হয়ে উঠেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতা ও বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি অভিযোগ করেছেন, তাদের বিপ্লবী জোশ ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড দেশের অস্থিরতার জন্য দায়ী।
সোমবার দুপুরে নিজের ফেসবুক পেজে ‘গণ-অভ্যুত্থান ও ছাত্র-তরুণবিরোধী শক্তি’ শিরোনামে দেওয়া একটি পোস্টে মাহফুজ আলম এই মন্তব্য করেন। সম্প্রতি ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ ও কলেজ শিক্ষার্থীদের বিশৃঙ্খলার প্রেক্ষাপটে তিনি এ বক্তব্য দেন।
পোস্টে মাহফুজ আলম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী দশ-পনেরো বছরের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধারা একে অপরকে হত্যা করেছে। যারা বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত হতে দিতে চায়নি, তারা এই হত্যাকাণ্ডে ইন্ধন জুগিয়েছে। যদিও মুক্তিযোদ্ধাদের নিজেদেরও ভুল ছিল, তবে এসব হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছে। ইতিহাস একদিন এসবের সঠিক চিত্র তুলে ধরবে।’
মাহফুজ আলম আরও উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক আন্দোলন ছিল সাহসী ছাত্র-তরুণদের নেতৃত্বে জনগণের আন্দোলন। কিন্তু একটি দল এবং দেশি-বিদেশি শক্তি ছাত্রদের বিভক্ত করতে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনকে ব্যবহার করেছে। তারা ছাত্রদের ভিলিফাই (সম্মানহানি) করেছে, একে অপরের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে এবং তাদের দাবির প্রতি সম্মান দেখানোর পরিবর্তে শত্রু হিসেবে গণ্য করেছে।
ছাত্র সংঘর্ষের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোতে প্রশাসনের ব্যর্থতারও সমালোচনা করেন মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, ‘বিদেশি শক্তি কখনো এ দেশের মানুষকে পদানত করতে পারবে না। কিন্তু কিছু গাদ্দার ও হঠকারী শক্তি এই কাজ করতে সক্ষম। তারা গত তিন মাসে যা করেছে, তা ছাত্রদের সংঘর্ষ ও হত্যার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এতে ছাত্র আন্দোলনের বৈধতা সংকটে পড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।’
মাহফুজ আলম বলেন, ‘যেসব শক্তি ছাত্রদের সংঘাতমুখী করতে উসকানি দিয়েছে, তারা সবাই এ প্রশাসনিক ব্যর্থতার সঙ্গে জড়িত। তবে ধীরে ধীরে আমরা সবকিছু প্রকাশ করব। অথবা জনগণ নিজেরাই সত্যটা বুঝতে পারবে।’
পোস্টে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘অনেক মিত্রই আজ হঠকারীর ভূমিকা পালন করছে। আমরা আমাদের ব্যর্থতা স্বীকার করছি এবং তা কাটিয়ে উঠতে কাজ করছি। আমরা সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাব। তবে ছাত্রদের অন্যায্যতার পথে ঠেলে দেওয়ার অপচেষ্টা জাতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’
মাহফুজ আলম তার পোস্টে আরও বলেন, ‘উসকানি, ছাত্রদের বিভক্ত করা এবং অভ্যুত্থানের শক্তিকে প্রতিক্রিয়াশীল করার অপচেষ্টা ব্যর্থ হবে। ইনশা আল্লাহ। এবার সংগঠিত ঐক্যের মাধ্যমে একটি দীর্ঘস্থায়ী মুক্তির সুযোগ তৈরি হবে।’
উপদেষ্টা মাহফুজ আলম তার পোস্টে ৫ আগস্টের ঐক্যের উদাহরণ টেনে বলেন, ‘সেই দিনের মতো ঐক্যবদ্ধ হওয়া গেলে বর্তমান সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এবারকার সাংগঠনিকভাবে গড়ে ওঠা ঐক্য দীর্ঘস্থায়ী মুক্তির পথ দেখাবে।’
ছাত্র সংঘর্ষ এবং দেশের অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে মাহফুজ আলমের এই বক্তব্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং সমাধানের বার্তা প্রদান করেছে।