ফ্যাসিবাদ পতনের পর দেশের ছাত্র, শ্রমিক ও জনতার অভ্যুত্থানের স্বপ্ন পূরণে গড়ে ওঠা ঐক্য ধরে রেখে সামনে এগিয়ে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক রূপান্তরে এগিয়ে নিতে ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে গণসংহতি আন্দোলনের ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত ‘রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার’ দাবিতে আয়োজিত এক গণসংলাপে জোনায়েদ সাকি এসব কথা বলেন।
জোনায়েদ সাকি বলেন, দেশের ১৯৭২ সালের সংবিধানও জনগণের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। বিভিন্ন সময়ে স্বৈরাচার সরকার মানুষের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছে। তাই নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠায় স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা ভেঙে জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা চালু করতে হবে। এ জন্য জনগণের ঐক্য অপরিহার্য।
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ভিত্তি হবে শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি, কৃষকের ফসলের ন্যায্যমূল্য ও গণতান্ত্রিক শ্রম আইন। যে শহীদদের রক্তের ওপরে দাঁড়িয়ে গণ-অভ্যুত্থানের বিজয় হয়েছে, সেই বীরদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে। গণহত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে এবং সংগ্রামে আহত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।’
গণসংলাপে দলের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান বলেন, ‘সব অংশীজনকে নিয়ে আগামী বাংলাদেশের সংস্কারের রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে। নির্বাচন ও সংস্কারের বিতর্ক বন্ধ করতে হবে। আগামী নির্বাচনকে সংস্কারের নির্বাচন হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। নির্বাচনের আগে সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা জরুরি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সংস্কার জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে আইনি বাধ্যবাধকতায় পরিণত করতে পারলে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পুনর্গঠনের নতুন ইতিহাস লেখা যাবে।’
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য গড়তে হবে এবং ক্ষমতার জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি না করে ঐক্যবদ্ধভাবে নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি।’
গণসংলাপে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, সৈয়দ মামুন মাহবুব, গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য মনির উদ্দীন, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূঁইয়া, দীপক রায়, তরিকুল সুজন, উন্নয়নকর্মী বরকত উল্লাহ, শিল্পী বীথি ঘোষ, গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় সহসভাপ্রধান অঞ্জন দাস, নারী সংহতির কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ সম্পাদক পপী রানি সরকার এবং উত্তরা ২৪-এর সংগঠক সামিয়া রহমান উপস্থিত ছিলেন।
দুই পর্বের এই সংলাপে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক মনিরুল হুদা ও দক্ষিণের আহ্বায়ক আলিফ দেওয়ান।
গণসংহতি আন্দোলনের পক্ষ থেকে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
তারা বলেন, শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা, কৃষকের ফসলের ন্যায্যমূল্য দেওয়া, গণতান্ত্রিক শ্রম আইন বাস্তবায়ন, শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, সংগ্রামে আহতদের পুনর্বাসন, গণহত্যাকারীদের বিচার।