নীলফামারীর সৈয়দপুরে মোছা. মুক্তা খাতুন (২৪) নামে এক নারীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। বিয়ের মাত্র ১৭ দিনের মাথায় তাঁর শ্বশুরবাড়ির শয়নকক্ষ থেকে লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মুক্তা শহরের কাজিরহাট এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় একটি বিউটি পার্লারের কর্মী ছিলেন। এ ঘটনায় তাঁর স্বামী মোহাম্মদ রানাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৭ দিন আগে মুক্তার সঙ্গে রানার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই দাম্পত্য জীবনে বনিবনা হচ্ছিল না। এলাকাবাসীর অভিযোগ, রানা প্রায়ই মুক্তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতেন।
গত শনিবার রাতে শ্বশুরবাড়িতে নিজ কক্ষে ঘুমাতে যান মুক্তা। কিন্তু আজ রোববার সকালে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। শ্বশুরবাড়ির লোকজনই প্রথমে তাঁকে মৃত অবস্থায় দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন।
নিহত মুক্তার ভাই মো. সাইদুল অভিযোগ করেন, এটি পরিকল্পিত হত্যা। তিনি বলেন, ‘আমার বোনের জামাই নেশাগ্রস্ত ছিলেন। তিনি বালিশচাপা দিয়ে আমার বোনকে হত্যা করেছেন।’
মুক্তার মা জাহেদা বেগম দাবি করেন, রানা তাঁর পূর্বের বিয়ের বিষয়টি গোপন করে মুক্তাকে বিয়ে করেন। রানার প্রথম স্ত্রী থেকে সন্তানও রয়েছে। বিয়ের পর থেকেই রানা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা মুক্তাকে নির্যাতন করতেন।
জাহেদা বেগম আরও বলেন, ‘এলাকার মানুষ আমাকে ফোনে জানাত যে মুক্তাকে নির্যাতন করা হচ্ছে। গত শনিবারও আমার মেয়েকে মারধর করেছে। পারিবারিক ষড়যন্ত্র করে তাঁরা আমার মেয়েকে হত্যা করেছে। আমি বিচার চাই।’
সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফইম উদ্দীন জানান, আজ সকালে কাজিরহাট এলাকার একটি বাড়ি থেকে মুক্তার লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, ‘ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরা শয়নকক্ষের বিছানায় গৃহবধূর মরদেহ পড়ে থাকতে দেখি। মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য নীলফামারী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।’
পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রানা স্ত্রী হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তাঁকে থানায় নিয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই মুক্তাকে নির্যাতন করতেন রানা। তাঁরা জানান, মুক্তা পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন। তাঁর মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। এ ঘটনায় স্বামী রানার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
বিয়ের ১৭ দিনের মাথায় রহস্যজনক মৃত্যুতে মুক্তা খাতুনের পরিবার ও এলাকাবাসী বিচার দাবি করেছেন। পুলিশ ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে। স্বামী রানার স্বীকারোক্তি ও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রকাশের পর ঘটনার বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে।