আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মেরুকরণ ও সংলাপের জোরদার প্রয়াস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে গতকাল সোমবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর আগেই জামায়াতে ইসলামী ও খেলাফত মজলিসের সঙ্গেও বিএনপির নেতারা বৈঠক করেছেন।
বিএনপি মহাসচিবের ইসলামী আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকটি নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজনৈতিক ঐক্যের অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে শুরু হওয়া বৈঠকটি দীর্ঘসময় ধরে চলে। বৈঠকে জোহরের নামাজ আদায় ও মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন বিএনপি মহাসচিব।
এর আগে, জামায়াতে ইসলামীর আমির বরিশালে গিয়ে চরমোনাই পীরের সঙ্গে দেখা করেন এবং ইসলামী আন্দোলনের নেতারা ইসলামি দলগুলোর মধ্যে ঐক্য তৈরির আহ্বান জানান।
বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল, ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে দূরত্ব কমানো। তাদের নেতৃত্বে দেওয়া আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমালোচনা থামানোর প্রচেষ্টা। নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণে অভিন্ন অবস্থান তৈরির চেষ্টা।
বৈঠকে জামায়াত প্রসঙ্গ উত্থাপিত হলে ইসলামী আন্দোলনের নেতারা বিএনপিকে মন্ত্রী বানানোর অতীত সিদ্ধান্তের জন্য দায়ী করেন।
বৈঠক শেষে দুই দল যৌথভাবে ১০টি বিষয়ে একমত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্তগুলো হলো, স্বাধীন-সার্বভৌম গণতান্ত্রিক কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা। দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসীদের শাস্তি নিশ্চিত করা। মানবাধিকার ও ভোটাধিকারের সুরক্ষা। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন। ইসলামবিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়ার নিশ্চয়তা। ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলো একে অপরকে আক্রমণ না করা।
বৈঠকে আনুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন ও নির্বাচনের সময় নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। ইসলামী আন্দোলন আনুপাতিক পদ্ধতির পক্ষে থাকলেও বিএনপি তা প্রত্যাখ্যান করে। বিএনপি আগামী জুলাই-আগস্টে নির্বাচন চাইলেও ইসলামী আন্দোলন এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত দেয়।
বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলনের নেতারা ঘোষণা দেন, তারা আওয়ামী লীগের মতো কোনো ফ্যাসিবাদী শক্তি যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে, সে জন্য একযোগে কাজ করবেন।
জামায়াতের বরিশালের বৈঠকের এক সপ্তাহের মধ্যেই ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপির এই বৈঠক হলো। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জামায়াতের সঙ্গে ইসলামী দলগুলোর সম্পর্ক গভীর করার বিপরীতে বিএনপি এই বৈঠকের মাধ্যমে ইসলামি দলগুলোকে নিজেদের সঙ্গে রাখতে চায়।
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, নির্বাচনের আগমুহূর্তে ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির এ ধরনের সংলাপ রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি করবে।