সাবেক সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা ২৪টি গাড়ি প্রথমবারের মতো নিলামে তোলা হয়েছে। তবে নিলামে তোলা ২৪টি গাড়ির মধ্যে ১৪টির দর উঠলেও ১০টিতে কোনো দর জমা পড়েনি। গাড়িভেদে সর্বোচ্চ ১ লাখ থেকে ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত দর উঠেছে। তবে, নিলামে প্রত্যাশিত দামের চেয়ে অনেক কম দর পাওয়ায় এই দফায় কোনো গাড়ি বিক্রি হচ্ছে না।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) টেন্ডার বাক্স উন্মুক্ত করার পর কাস্টমস কর্মকর্তারা হতবাক হন। প্রত্যাশিত মূল্যের অর্ধেক দরও ওঠেনি। তাই কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অনুমোদন নিয়ে গাড়িগুলো পুনরায় নিলামে তোলার পরিকল্পনা করছে।
আমদানি করা পণ্য ৩০ দিনের মধ্যে বন্দর ইয়ার্ড থেকে সরিয়ে নিতে হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে না নিলে কাস্টমস আমদানিকারককে ১৫ দিনের নোটিশ দেয়। এরপরও পণ্য সরিয়ে না নিলে তা নিলামে তোলা হয়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সাবেক এমপিরা শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানি করেছিলেন। তবে ৬ আগস্ট সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর এনবিআর এ সুবিধা বাতিল করে। এতে সাবেক এমপিরা গাড়িগুলো ফেলে যান। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস এগুলো বিক্রির জন্য নিলামে তোলে।
নিলামে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এস এ ট্রেডিং অ্যান্ড কোম্পানি ৬টি, কেডিএস গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ৫টি, ফারজানা ট্রেডিং ৪টি, চট্টগ্রাম কাস্টম বিডার অ্যাসোসিয়েশন ২টি গাড়িতে দর দিয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ১টি করে গাড়ির দরপত্র জমা দিয়েছে।
সবচেয়ে বেশি দর জমা পড়েছে, ২০১৯ মডেলের টয়োটা এস্কোয়ারে (২০টি দরপত্র), ২০১৮ মডেলের টয়োটা হ্যারিয়ারে (১৩টি দরপত্র), ২০২০ মডেলের টয়োটা হ্যারিয়ারে (৯টি দরপত্র)।
নিলামে তোলা সাবেক এমপিদের মধ্যে রয়েছেন: এস এম কামাল হোসাইন (খুলনা-৩), আবুল কালাম আজাদ (জামালপুর-৫), সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী (ফরিদপুর-২), আক্তারউজ্জামান (গাজীপুর-৫), শাম্মী আহমেদ (সংরক্ষিত আসন-১৭), সুরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী (নওগাঁ-৩), মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ (ময়মনসিংহ-১১), মোহাম্মদ সাদিক (সুনামগঞ্জ-৪), এস এ কে একরামুজ্জামান (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১), মো. নাসের শাহরিয়ার (ঝিনাইদহ-২), জান্নাত আরা হেনরী (সিরাজগঞ্জ-২), শাহ সরোয়ার কবীর (গাইবান্ধা-২), মজিবুর রহমান মঞ্জু (বগুড়া-৫), মো. তৌহিদুজ্জামান (যশোর-২), আব্দুল মোতালেব (চট্টগ্রাম-১৫), সানজিদা খানম (সংরক্ষিত আসন-৩২), মোহাম্মদ আলী আরাফাত (ঢাকা-১৭), তারানা হালিম (সংরক্ষিত আসন-১৮), রুনু রেজা (সংরক্ষিত আসন-১২), মো. আসাদুজ্জামান (রংপুর-১), মো. সাদ্দাম হোসাইন (নীলফামারী-৩), মো. সাইফুল ইসলাম (ঢাকা-১৯), এবিএম আনিসুজ্জামান (ময়মনসিংহ-৭), সাজ্জাদুল হাসান (নেত্রকোনা-৪)।
কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানায়, সাবেক এমপিদের আমদানি করা ২৪টি গাড়ি একেবারে নতুন। সাবেক এমপি এস এম কামাল হোসেনের গাড়ির সর্বোচ্চ দর উঠেছে ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা। শুল্কমুক্ত সুবিধার বাইরে আমদানি করা ২০টি গাড়ির দর উঠেছে ২ লাখ থেকে ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকার মধ্যে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সংরক্ষিত দর নির্ধারণ করেছিল ৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।
নিলামে অংশ নিয়ে গাড়ি কিনতে হলে সংরক্ষিত মূল্যের ৬০ শতাংশ দর দিতে হয়। অর্থাৎ, প্রতিটি গাড়ির জন্য কমপক্ষে ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা দর দেওয়া প্রয়োজন ছিল। তবে এত বেশি দাম কেউ দেয়নি।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলাম শাখার সহকারী কমিশনার সাকিব হোসেন জানান, “নিলামের দর আশানুরূপ না হওয়ায় নিলাম কমিটির সভায় আলোচনা হবে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে এনবিআর।”
নিলামে অংশ নেওয়া এস এ ট্রেডিং অ্যান্ড কোম্পানির স্বত্বাধিকারী মো. ইব্রাহিম বলেন, “এবার আমরা কম দাম দিয়ে বিড করেছি। পরবর্তী নিলামে কিছু বেশি দাম দিয়ে গাড়িগুলো নেওয়ার পরিকল্পনা করছি।”