বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান নগদ ভয়াবহ ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে ৬৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ই-মানি তৈরি করে অবৈধভাবে টাকা ছাপিয়ে বাজারে ছাড়ার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া আরও ২ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকা লোপাট করেছে নগদ, যা আর্থিক খাতে বিশাল সংকট সৃষ্টি করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক তদন্ত প্রতিবেদনে নগদের এই চাঞ্চল্যকর জালিয়াতির ঘটনা উঠে এসেছে। বাংলাদেশে এই প্রথম ডিজিটাল মাধ্যমে ই-মানি তৈরি করে টাকা ছাপানোর মতো অপরাধ ঘটেছে।
মূল অভিযোগসমূহ: নগদের অ্যাকাউন্টে থাকা টাকার চেয়ে ৬৪৫ কোটি টাকা বেশি ই-মানি ইস্যু করা হয়েছে। অনুমোদন ছাড়াই ৪১টি পরিবেশকের হিসাব খুলে ১,৭১১ কোটি টাকা লোপাট। সরকারি ভাতা বিতরণের নামে অর্থ আত্মসাৎ। তিনদিনের মধ্যে উত্তোলন না করা ভাতার টাকা আত্মসাৎ। অবৈধভাবে ২,৩৫৬ কোটি টাকা সরানোর অভিযোগ।
নগদ প্রথমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন পায়নি। এরপর ডাক বিভাগের আইন পরিবর্তন করে তারা মোবাইল ব্যাংকিং চালু করে। পরবর্তীতে সাময়িক লাইসেন্স পেলেও স্থায়ী লাইসেন্স পায়নি।
নগদের মালিকানায় আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা জড়িত ছিলেন। প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের নাম উঠে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফজলে কবির ও আব্দুর রউফ তালুকদার নগদের অনিয়ম সম্পর্কে জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেননি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় নগদের প্রতারণা চলতে থাকলেও কেউ মুখ খোলেনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেব্রুয়ারিতে নগদের বিরুদ্ধে মামলা করে, যা অবৈধভাবে টাকা ছাপানোর প্রথম মামলা। এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নগদের বিরুদ্ধে ২,৩৫৬ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা করেছে।
নগদের মালিকানা ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, নগদের শুরুতে আওয়ামী লীগের তৎকালীন দুই সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক ও রাজী মোহাম্মদ ফখরুল শেয়ারহোল্ডার ছিলেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকনের স্ত্রী রেজওয়ানা নূর মালিকানা পেয়েছিলেন, পরে তা ছেড়ে দেন। নগদের শেয়ারহোল্ডার নিয়াজ মোর্শেদ যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনায় বাংলাদেশ, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও সিঙ্গাপুরের কোম্পানির প্রতিনিধিরা আছেন।
২০২৩ সালের ২১ আগস্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংক নগদে প্রশাসক নিয়োগ করে। প্রশাসক নিয়োগের পর জড়িত কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করা হয় এবং তদন্তে উঠে আসে জালিয়াতির চাঞ্চল্যকর তথ্য।
নগদের ভয়াবহ তিন হাজার কোটি টাকার জালিয়াতি দেশের আর্থিক খাতের জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করেছে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত এই জালিয়াতির ঘটনায় রাজনৈতিক মহলসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। মামলার তদন্তের অগ্রগতি এবং দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ।