দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর যমুনা নদীর ওপর নির্মিত রেল সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) সকালে সেতুর পূর্ব প্রান্তে ইব্রাহিমাবাদ রেলস্টেশন এলাকায় পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সেতুটির উদ্বোধন করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফাহিমুল ইসলাম। বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক এম আফজাল হোসেনের সভাপতিত্বে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনিচি এবং জাপানের বৈদেশিক উন্নয়ন সংস্থা জাইকার দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক মহাপরিচালক ইতো তেরুয়ুকি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেতুটি চালু হওয়ায় দেশের যোগাযোগ, বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। বিশেষ করে উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিম অঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার রেল যোগাযোগ আরও সহজ হবে, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করবে।
রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় কার্যালয়ের বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) গৌতম কুমার কুন্ডু জানিয়েছেন, এই সেতুর মাধ্যমে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দ্রুতগতির রেল যোগাযোগ সম্ভব হবে। প্রতিদিন ৩০টি আন্তনগর ও ২টি কমিউটার ট্রেন সেতুটি ব্যবহার করে চলাচল করবে।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো রাজশাহী থেকে সিল্ক সিটি এক্সপ্রেস যাত্রী নিয়ে যমুনা রেল সেতু পার হয়ে ঢাকায় পৌঁছায়। পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেনটি ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে চলার ফলে সেতু পার হতে সময় লেগেছিল প্রায় সাড়ে ৩ মিনিট।
যমুনা রেল সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৬ হাজার ৭৮০ দশমিক ৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭২ দশমিক ৪ শতাংশ ঋণ হিসেবে দিয়েছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা), আর বাকি অর্থ সরকার বহন করেছে। জাপানের ওটিজি এবং আইএইচআই যৌথভাবে সেতুটি নির্মাণ করেছে।
২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর এই সেতুর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় এবং ২০২১ সালের মার্চে পিলার নির্মাণের জন্য পাইলিং কাজ শুরু হয়। ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই রেল সেতু দেশের প্রথম ডাবল ট্র্যাকের ডুয়েল গেজের দীর্ঘতম সেতু।
নতুন এই রেল সেতুর উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশের রেল যোগাযোগ আরও গতিশীল হবে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দ্রুত ও উন্নত যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের সুবিধার কারণে দেশের সামগ্রিক পরিবহন খাতেও ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।