বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে ফুটবল আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে। শিলং থেকে ফুটবল দল ফিরেছে মাথা উঁচু করে, আর এর পেছনে অন্যতম কারণ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রবাসী ফুটবলার হামজা দেওয়ান চৌধুরীর অসাধারণ পারফরম্যান্স। তার উপস্থিতি একটি দলকে কতটা বদলে দিতে পারে, সেটার প্রমাণ মিলেছে এই ম্যাচে। যদিও সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারলে, বাংলাদেশ হয়তো ভারতের মাটিতে প্রথমবারের মতো ভারতকে হারানোর রেকর্ড গড়তে পারত।
বাংলাদেশ বনাম ভারতের মধ্যকার ম্যাচে লড়াইয়ের চূড়ান্ত ফয়সালা হয়নি, তবে এই ড্র ফিরতি ম্যাচের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। তবে মনে রাখতে হবে, ভারতের নিয়মিত পাঁচজন খেলোয়াড় এই ম্যাচে খেলতে পারেননি। তাই ড্র নিয়ে আত্মপ্রসাদ অনুভব করলে বাংলাদেশ দল ভুল করবে। আগামী নভেম্বরের ফিরতি ম্যাচ পর্যন্ত সকলের চোখ থাকবে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্সের দিকে।
গত এক সপ্তাহ ধরে ফুটবল নিয়ে বাংলাদেশিদের মধ্যে যে উন্মাদনা দেখা গেছে, তা অভূতপূর্ব। ক্রিকেটের জনপ্রিয়তার আড়ালে চাপা পড়ে থাকা ফুটবল এবার নতুন করে আলোচনায় এসেছে। ভারতেও একই পরিস্থিতি হয়েছিল সৌরভ গাঙ্গুলির উত্থানের পর। কিন্তু বাংলাদেশ ভাগ্যবান, কারণ হামজা চৌধুরীর মতো একজন ক্যারিশমাটিক ফুটবলারকে পেয়েছে, যিনি মাঠে দর্শক টানতে সক্ষম।
টিভিতে শিলংয়ের ম্যাচ দেখে হামজার পারফরম্যান্স সত্যিই চমকে দেওয়ার মতো ছিল। তার ঝাঁকড়া চুল দেখে অনেকেই প্রথমে তাকে রুদ গুলিতের (সুরিনামি বংশোদ্ভূত ডাচ ফুটবলার) সঙ্গে তুলনা করেছেন। যদিও গুলিতের মতো হাইপ্রেসিং ফুটবল খেলার দক্ষতা তার নেই, তবে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে, যা একটি দলকে অনেক দূর নিয়ে যেতে পারে। মাঠে সতীর্থদের গাইড করা, বিপক্ষের কাছ থেকে বল কেড়ে নেওয়া এবং ডিফেন্সিভ স্ট্র্যাটেজি সামলানোর দক্ষতা তাকে অনন্য করে তুলেছে।
হামজার অসাধারণ পারফরম্যান্সের পর, তাকে অনেকেই বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ফুটবলার হিসেবে অভিহিত করছেন। তবে এটি নিঃসন্দেহে অতিরঞ্জিত মন্তব্য। কাজী সালাউদ্দিন, মোনেম মুন্নার মতো কিংবদন্তিদের অবদান ভুলে গেলে চলবে না। শুধুমাত্র ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলার কারণে তাকে দেশের সেরা ফুটবলার বলা যথার্থ হবে না। বরং তাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কাজে লাগানো দরকার।
হামজার সঙ্গে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কী ধরনের চুক্তি হয়েছে, তা পরিষ্কার নয়। তবে ফিফার নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি ম্যাচের আগে তিনি কেবল চার-পাঁচ দিনের ছুটি পাবেন, যা অন্যান্য খেলোয়াড়দের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য যথেষ্ট নয়। এছাড়া, বর্তমান বাংলাদেশ দলে তার সমকক্ষ কোনো টেকনিক্যালি দক্ষ খেলোয়াড় নেই। তাই কেবল হামজার ওপর ভরসা না করে, একটি সুসংগঠিত দল গঠনের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।
অনেক এশীয় দেশ বিদেশি বংশোদ্ভূত খেলোয়াড়দের নিয়ে দল গঠনের চেষ্টা করেছিল, যেমন চীন, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। কিন্তু তারা গ্রাসরুট ডেভেলপমেন্টের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে একাডেমি চালু করেছে। আফ্রিকার দেশগুলোও একাডেমি থেকে উঠে আসা খেলোয়াড়দের বিদেশি বংশোদ্ভূতদের সঙ্গে মিশিয়ে সফল দল তৈরি করেছে। তাই বাংলাদেশেরও উচিত শুধু বংশোদ্ভূত ফুটবলারদের ওপর নির্ভর না করে স্থানীয় প্রতিভা বিকাশে জোর দেওয়া।
যদি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং স্থানীয় প্রতিভা গড়ে তোলার দিকে নজর দেয়, তবে দেশের ফুটবল ভবিষ্যতে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তাকে চ্যালেঞ্জ করার মতো অবস্থানে পৌঁছতে পারে।