জামালপুর শহরের দরিপাড়া এলাকায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাসরত প্রতারক দম্পতি জনি ও লিজা ভুয়া পরিচয়ে নানা ধরনের প্রতারণা চালিয়ে আসছে। শুরুতে তারা জামালপুর জেলা জজ কোর্টে আইন সহকারী পরিচয়ে ঘোরাফেরা করত। একজন এডভোকেটের সাথে নিয়মিত আসা-যাওয়া করতে দেখা যেতো তাদের। সময়ের সঙ্গে স্থানীয়দের সন্দেহ বাড়তে থাকে এবং অনুসন্ধানে জানা যায়, তারা প্রকৃতপক্ষে কোনো আইন সহকারী নয়, বরং প্রতারণার ফাঁদ পাতছে।
পরে জনি ও লিজাকে জামালপুর প্রেসক্লাবের এক সহযোগী সদস্যের সাথে মেলামেশা করতে দেখা যায়। মেলান্দহের নিরিবিলি হোটেলে তাদের একসঙ্গে খাবার খেতেও দেখা যায়। এসময় পরিচয় জানতে চাইলে প্রেসক্লাবের সদস্য জানান, জনি ও লিজা সাংবাদিকতা শিখতে আগ্রহী। তবে এরপর থেকেই সাংবাদিক পরিচয় ব্যবহার করে তারা প্রতারণা শুরু করে।
প্রথম বড় প্রতারণার ঘটনা ঘটে জামালপুর জেলা কারাগারে। সেখানে দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ বন্ধ করার কথা বলে জেলার আবু ফাতেহের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে তারা। পরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, জামালপুর জেলা অফিসে গিয়েও তারা সংবাদ প্রতিবাদ বিজ্ঞাপনের নামে ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রকৌশল অফিসের স্টাফরা জানায়, জনি ও লিজা নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে, প্রকৃত সাংবাদিকদের নাম ব্যবহার করে এই টাকা আদায় করে।
এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করতে একজন প্রকৃত সাংবাদিক জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অফিসে গিয়ে অনুসন্ধান করেন। অফিসের কর্মীরা জানান, তারা সাংবাদিক ভাইয়ের নাম বলে প্রতারণা করেছে। পরে দরিপাড়ায় গিয়ে প্রতারক দম্পতির সাথে সরাসরি কথা বললে, লিজা অকথ্য ভাষায় হুমকি দিয়ে বলেন, “আপনি বেশি বাড়াবাড়ি করলে আপনার নামে মামলা করবো।”
স্থানীয় সুমন নামের এক ব্যক্তি বলেন, জনির আচরণ দেখে মনে হয় সে মাদকাসক্ত এবং যেকোনো সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটাতে পারে। তিনি সাংবাদিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।
এছাড়া জনির মোবাইল ফোন এবং লিজার ফেসবুক আইডি থেকেও সাংবাদিকদের হুমকি প্রদান করা হয়। এ সংক্রান্ত কিছু প্রমাণ সাংবাদিকদের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হলে জামালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি আলহাজ্ব হাফিজ রায়হান (সাদা) জানান, জনি ও লিজা ক্লাবের কোনো সদস্য নয় এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে ক্লাবের কোনো আপত্তি নেই। সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমানও বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
পরবর্তীতে প্রতারণার টাকা ফেরতের জন্য জনি ও লিজাকে চাপ দেওয়া হলেও তারা তা ফিরিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এক পর্যায়ে জামালপুর সদর থানায় যোগাযোগ করা হলে, ওসি জানান, এ ধরনের প্রতারণা ‘চাঁদাবাজি’ মামলার আওতায় পড়ে এবং ভুক্তভোগীকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন। জানা গেছে, প্রতারকরা প্রথমে ২০ হাজার টাকা এবং পরে তিন ধাপে আরও ২০ হাজার টাকা নিয়ে মোট ৪০ হাজার টাকা আদায় করেছে।
বর্তমানে প্রতারক জনি ও লিজার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। সাংবাদিক মহল ও সচেতন নাগরিক সমাজ এ ধরনের ভুয়া সাংবাদিকদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে।